করোনা মহামারিতে ধস নেমে এলেও ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে সিঙ্গাপুরের পর্যটনখাত। তাই এশিয়ার শীর্ষ ধনীদের নজর এখন সিঙ্গাপুরের দিকে। এশিয়ার অন্তত ১০ জন শীর্ষ ধনী সিঙ্গাপুরের হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে হংকংয়ের পানসি হো ও ইন্দোনেশিয়ার সুকান্ত তানোতো। নতুন নতুন হোটেল নির্মাণে এসব ধনীরা প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছেন।
মার্কিন বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্চার্ড রোডে সিঙ্গাপুরের প্রধান শপিং স্ট্রিপ। এর আশপাশে বেশ কয়েকটি নতুন হোটেল হবে। এরই মধ্যে সেখানে ১৯ তলা বিশিষ্ট হোটেল নির্মাণ করছে ইওএল গ্রুপ। হোটেলটিতে অতিথিদের জন্য থাকবে অন্তত ২০০টি কক্ষ। তবে এর পাশেই আরও একটি হোটেল নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার ধনকুবের মোক্তার রিয়াডির ওইউই হিলটন অর্চার্ড পুনরায় চালু করেছে। এটির অন্তত ১০৮০টি রুম নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে, যেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে সিঙ্গাপুরের কৃষি ঐতিহ্য। পাশেই রয়েছে অরেঞ্জ গ্রোভ রোড। ইন্দোনেশিয়ার আরেক ধনী বাখতিয়ার করিম তার ট্রেন্ডিং ব্র্যান্ড দ্য স্ট্যান্ডারের অধীনে সেখানে একটি হোটেল নির্মাণ করেছেন। এতে অন্তত ১৪৩টি কক্ষ রয়েছে, যা আগামী বছর চালু হবে।
অর্চার্ড রোড থেকে একটু দূরে চলতি মাসে কার্যক্রম চালুর কথা রয়েছে সিওএমও মেট্রোপলিটন সিঙ্গাপুরের। ১৫৬টি কক্ষের এই হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সটি তৈরি করেছে সিওএমও হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস।
এদিকে মহামারি পরবর্তী সময়ে লায়ন সিটিতে পর্যটকদের সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় গত জুলাই মাসে দ্বিগুণ হয়েছে। সিঙ্গাপুরের পর্যটন বোর্ড জানিয়েছে, ভ্রমণকারীদের অধিকাংশই চীনা। তবে সিঙ্গাপুর সরকার আশা করছে এ বছর অন্তত এক কোটি ৪০ লাখ পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করবে, যারা ব্যয় করবে ২১ বিলিয়ন স্থানীয় মুদ্রা।
অন্যদিকে দেশটিতে পর্যটকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হোটেল ভাড়া। চলতি মাসে সিঙ্গাপুরে গড় রুম ভাড়া রাতপ্রতি বেড়ে ৮৮০ সিঙ্গাপুরি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।
মেরিনা বে’র অপর প্রান্তে মালয়েশিয়ার ধনকুবের ভাই লি ইয়েও শোর এবং লি ইয়েও সেং তাদের আইওআই প্রপার্টিজের অধীনে একটি হোটেল তৈরি করছে। এতে বাণিজ্যিক প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে র্যাফেলস প্লেসের তানজং পাগারে ইন্দোনেশীয় ধনকুবের সুকান্ত তানোতোর প্যাসিফিক ঈগল রিয়েল এস্টেট জুলাই মাসে সেখানে তার প্রথম হোটেল চালু করেন। চায়নাটাউনের কাছে ৩০৪ কক্ষের মন্ড্রিয়ান ডাক্সটন সিঙ্গাপুর নামের হোটেলটি ৪০০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলারে নির্মাণ করা হয়।
মন্ড্রিয়ান ডাক্সটনের মহাব্যবস্থাপক রবার্ট সি হাক বলেন, আমাদের অন্য শহরের সঙ্গে আঞ্চলিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে হবে। কিন্তু হোটেল ব্যবসার জন্য এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের কেন্দ্র মনে হচ্ছে।
অপরদিকে কেপেল হারবারজুড়ে সেন্টোসা দ্বীপে বিলাসবহুল অল-ভিলা র্যাফেলস সেন্টোসা রিসোর্ট ও স্পা সেন্টার নির্মাণ করছে ধনকুবের অশোক কুমার হিরানন্দানির রয়্যাল গ্রুপ। আগামী বছর রিসোর্টটির জমকালো উদ্বোধন হবে। এজন্য এর নির্মাণে ওভারটাইম কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
আবার অর্চার্ড রোডের কাছে একটি পুরনো শপিংমলকে হোটেলে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে রয়্যাল গ্রুপের। একই সড়কে আগামী নভেম্বরে ১৪২ কক্ষের আর্টিজেন সিঙ্গাপুর খুলবে পানসি হো'স শুন তাক হোল্ডিংস। সেখানে থাকবে ছাদবাগান। পাশাপাশি অতিথিরা ২৫ মিটার পুলে সাঁতার কাটার সুযোগ পাবেন।
এছাড়াও নভেম্বর মাসে ধনকুবের কেওয়েক লেং বেং-এর সিটি ডেভেলপমেন্টস ও হং লিওং গ্রুপ সিঙ্গাপুরের প্রথম সংস্করণ হোটেল চালু করবে। এতেও রয়েছে বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধা, ২০৪টি কক্ষ। মূলত এভাবেই সিঙ্গাপুরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এশিয়ার ধনকুবেররা।