সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

উপজেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণিশিক্ষক করেন দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি!

আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১১ পিএম

সরকারি বিধিমালা উপেক্ষা করে একই ব্যক্তি শিক্ষকতা করছেন দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তিন মাস এভাবে চলার পর বিষয়টি নজরে আসায় নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম লঙ্ঘন করা এই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। তিনি একটিতে শিক্ষকতা করছেন (শরীরচর্চা) সহকারী শিক্ষক হিসেবে। অন্যটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান অন্যটি ননএমপিওভুক্ত তবে এই স্কুলটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিও এটি এসএসসি পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাব্য তালিকা আছে। ইতিমধ্যে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পদে আবেদন করেছেন।

মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের বাড়ি লালমাই জেলা গোসাই পুস্করণী গ্রামে। তিনি ০৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সাল থেকে চিওড়া আজগরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতাও নিয়মিত পাচ্ছেন তিনি। তার ইনডেক্স নম্বর ৩১৯৭৫২। দেখা যাচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসে বেতন উত্তলোন করেন ২৩৫০০ টাকা। এরই মধ্যে ২০২৩ সালের ০৭ জুলাই লালমাই উপজেলা কলমিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। সেখানেও তিনি কর্মরত আছেন অদ্যাবধি। এই প্রতিষ্ঠান থেকেও আগস্ট মাসে ১১৪০০ টাকা বেতন উত্তোলন করেন।

কলমিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ জহির হোসেন বলেন, তিনি এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে ক্লাস নিতেন। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পারি তিনি চিওড়া আজগরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া আজগরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়েজউল্লাহ বলেন, প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আগস্ট মাসে তিনি ছুটির জন্য দরখাস্ত করেন। পরবর্তী মিটিংয়ের মাধ্যমে (শর্তসাপেক্ষে, তার পরিবর্তনে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিতে হবে) তার ছুটি মঞ্জুর করা হয়। খণ্ডকালীন শিক্ষক তিনি ক্লাস করাতে পারছে না। এখানের শিক্ষক সংকট এই বিষয়গুলো সভাপতি সাথে আলোচনার মাধ্যমে তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি ০৬/১০ তারিখ থেকে এখন নিয়মিত ক্লাস করছেন।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, একজায়গা থেকে বেতন উত্তোলন করি। প্রতিবেদক বলেন, আপনি দুই জায়গায় চাকরি করেন এবং দুজায়গা থেকে বেতন উত্তোলন করেন, ডকুমেন্টস আছে। তার প্রত্যুত্তরে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, আপনার কাছে ডকুমেন্টস থাকতে পারে, আমি একজায়গা থেকে বেতন নিই এবং এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আরও অন্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক। অন্যদিকে তিনি জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ সালের উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণিশিক্ষক নির্বাচিত।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেন বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। বিষয়টি আমি দেখছি, তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে লালমাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসা. রোকসানা আকতার বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবগত নয়, জেনে জানতে চাইব তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক হতে চান নাকি খণ্ডকালীন শিক্ষক হতে চান?

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক কিভাবে দুই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্তা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত