শীতে সবাই কমবেশি গরম খাবার খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু খাবার বেশি গরম খেয়ে ফেললে দাঁতের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই এসময়টাতে খাবার কতটা গরম খাবেন জানালেন ডাক্তার নীলা আফরোজ
শীতে সিজনাল এফেকটিভ ডিজঅর্ডার বা উইন্টার বুজের মতো দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়। যাদের আগে থেকে মাড়ির রোগ, দাঁত ক্ষয়, দাঁতের গোড়া থেকে মাড়ি সরে যাওয়া ইত্যাদির মতো অবস্থা থাকে তারা এ ধরনের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। দাঁতের গঠনশৈলী শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় মজবুত হলে এর অবস্থা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। দাঁতের সবচেয়ে ওপরের আবরণ অ্যানামেলের নিচে ডেন্টিন নামক উপাদান থাকে, যা কিছু টিবিউলস ধারণ করে। এটা তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। আর যখনই অতিরিক্ত দাঁত মাজা বা টুথ হোয়াইটোনিং উপাদান বা অন্যান্য কারণে অ্যানামেল ক্ষয় হয়ে ডেন্টিন অংশটি অনাবৃত থাকে তখনই ঠান্ডা বাতাস ডেন্টিনকে আঘাত করে দাঁতে ব্যথা এবং শিরশির অনুভূতির জন্ম দেয়। এ ছাড়াও শীতকালে পানি বা অন্যান্য তরল পানীয় কম গ্রহণ করায় মুখ শুষ্ক থাকে। ফলে মাড়ি ও দাঁতের রোগের সৃষ্টি হয়। শীতকালে ঠা-াজনিত কারণে অনেকের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার দরুন মুখ দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে গিয়ে দাঁতের সমস্যা তৈরি হয়। দাঁতের এই সিজনাল ব্যথা বা শিরশির অনুভূতি সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা যায়।
যা করবেন
দাঁত সুস্থ রাখতে প্রসেসড ফুড, গরম পানীয় বা প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলুন। এ ধরনের খাবার খুব তাড়াতাড়ি দাঁতের ক্ষয় করে। যাদের বেশি কফি খাওয়ার নেশা তাদের দাঁত ক্ষয়ও হয় তাড়াতাড়ি। ছোপও পড়ে দাঁতে। ক্ষয় রুখতে কফি খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খুব গরম খাবার বা পানীয়ে খেলে যদি দাঁতে শিরশিরানির সমস্যা হয়, অসহ্য লাগে তা হলে বেশি গরম খাওয়া এড়িয়ে চলুন। গরম চা, কফি, খুব গরম স্যুপ বা খাবার দাঁতের ক্ষতি করে। গরম খাবার সহনীয় তাপমাত্রা করে তবেই খাবেন। খুব গরম খাবার খেলে যেমন দাঁতের ক্ষয় হয়, তেমনই অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার থেকে শিরশিরানিও দাঁতের ক্ষতি করে। তাই খুব গরম খাবার যেমন এড়িয়ে চলবেন, খুব ঠান্ডা খাবারও এড়িয়ে চলুন। দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সবচেয়ে উপকারী ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার। লেবু, বেল পেপার, কাঁচা লঙ্কা, পেয়ারা যত বেশি সম্ভব খান। মরসুমি ফল, শাকসবজি সব সময় রাখুন ডায়েটে। এসব খাবার শরীরের পাশাপাশি দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। শুধু খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস বদলালেই চলবে না, দাঁত সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো কিছু খাওয়ার পর ভালো করে মুখ ধোয়া এবং নিয়মিত ওরাল হাইজিন মেনে চলা। শীতকালে পরিমাণমতো পানি ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খাবেন। দাঁতের জন্য উপযুক্ত হলো ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ মাউথওয়াশ ও টুথপেস্ট দাঁত দিয়ে দাঁত ঘেঁষা, অত্যাধিক কোমলপানীয় গ্রহণ, অনেক সময়জুড়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দাঁত মাজা ইত্যাদি বদঅভ্যাস বাদ দিতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ও সকালে নাশতা খাবার পর দাঁত মাজবেন। ছয় মাস পর পর দাঁতের স্কেলিং করিয়ে নেবেন।