অভিনয়ের সঙ্গে নভেরার সম্পর্ক জন্মের পর থেকেই, মাত্র দুই মাস বয়সে। যেন সুকান্তের কবিতার মতোই জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি...। নভেরার মা খ্যাতনামা অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী, স্বাভাবিকভাবেই নভেরা জন্মের পরেই দেখেন চারদিকে অভিনয়। মাত্র দুই মাস বয়সে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয় করেন। নাটকের নাম দূরে কোথাও। মা আরণ্যকে কাজ করেন, ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি নভেরার বেড়ে ওঠা হচ্ছিল মঞ্চে, নেপথ্যে।
স্কুল-কলেজ শেষ করে, এক সময় স্নাতকে পড়তে কানাডায় চলে গেলেন নভেরা। কানাডার সেইন্ট থমাস ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিকস বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ায় তিনি পাশের বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু কোর্স করার সুযোগ নিলেন। থিয়েটার বিষয়ক কিছু কোর্স শুরু করলেন। সেখানের থিয়েটারে পেশাদারভাবে কাজ শুরু করলেন। বার্ড ইন দ্য ব্যারাক নামের একটি থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করলেন। কানাডার পার্কে পার্কে নাটক মঞ্চস্থ করে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু একই সরলরেখায় চলার পথে কখন যে মাঝরাস্তায় যতিচিহ্ন পড়ে যায় কে বলতে পারে। তৃতীয় বর্ষে কানাডার শীতে প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে পড়লেন। শীতের গভীরতা কত হলে মানুষকে তীব্র হতাশায় ফেলতে পারে এটা অনুমেয়।
নভেরা বললেন, ‘অসহনীয় হয়ে উঠেছিল সময়টা, ঢাকায় চলে এলাম। আমার প্রিয় শহর। মনে হলো যেহেতু স্নাতক সম্পন্ন হয়নি, তাই স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়া সম্ভব না। মনোযোগ দিলাম অভিনয়ে। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি বললেন, রুবাইয়াতের একটা সিনেমার জন্য মেয়ে দরকার। তুমি অডিশন দাও। রুবাইয়াত হোসেনের সঙ্গে দেখা করলাম। মেইড ইন বাংলাদেশে কাজ করলাম। এভাবেই চলচ্চিত্রে।’
মেইড ইন বাংলাদেশে প্রধান চরিত্র রিকিতা নন্দিনী শিমুর প্যারালাল ছিলেন। শিমুর বান্ধবী, একই সঙ্গে তারই বিরোধী। এরপর আলোচনায় এলেন রিকশা গার্ল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। এই ছবিটা একজন নভেরার মনে রাখার স্মৃতির অ্যালবামকে ঋদ্ধ করেছে। কথা বলতে গিয়েই বললেন, ‘রাস্তার পাশে অসংখ্যবার খেয়েছি। এসব হোটেলকে ছালাদিয়া হোটেল বলে। রিকশাওয়ালারা যেখানে খায়। খেতে যাওয়ার সময় আমি উইগ পড়েছিলাম। অনেকেই চিনতে পারেনি। তাদের সহকর্মী ভেবেই আমার সঙ্গে আচরণ করেছে। একবার ছালাদিয়ায় খেতে গেলাম, একজন রিকশাওয়ালা তাদের সহকর্মী ভেবে আমার সঙ্গে একটানা তার জীবনের গল্প বলে যাচ্ছিলেন আর আমি তরকারি বেছে বেছে দেখছিলাম। পরে বেগুন ভাজি ও ভাত খেলাম আমার প্রিয় খাবার।’
আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে পারে এই সিনেমা। নির্মাতা অমিতাভ রেজা এমনটাই জানালেন। এই ছবি নিয়ে বলতে গিয়ে নভেরা বলেন, ‘একটা স্মৃতি আমার কাছে লাইভ। আমি রিকশা চালাচ্ছি। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। সারা দিন শুটিং করেছি। পা চলছে না। সে সময় একজন রিকশাওয়ালা আমার রিকশাকে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। এই বিষয়টা আমাকে আপ্লুত করেছে।’
রিকশাগার্ল অবশ্য সরাসরি নির্বাচিত ছিলেন না নভেরা। তিনশজন অডিশন দিয়েছিলেন সেখান থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। এই ছবি করতে গিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন অভিনেত্রী। নভেরা এখন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের অধীনে প্রোডিউসিং ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনে স্নাতকোত্তর করছেন। সহসাই দেশে ফিরছেন না নভেরা রহমান। জানালেন, সেখানেই পেশাদার কিছু কাজ শুরু করেছেন। দেশে ফিরে অভিনয় নিয়ে সম্ভাবনা দেখেন না। তার ভাষ্য, ‘যারা নির্মাণ করছে তারা জনপ্রিয়তার নিরিখে শিল্পী নেন। এখানে আমারও বলার কিছু নেই। তারা তো তাই নেবেন। তাই দেশে গিয়ে করব কী? দেখা যাক। পড়াশোনা শেষ হোক।’