গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে মৃত্যু হয় পাবনার বাসিন্দা রফিকুন্নাহারের (ডাকনাম পলি খাতুন) (৬০)। স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে পাবনার একটি হাসপাতালে এবং চিকিৎসকদের পরামর্শে পরবর্তীতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৮ ডিসেম্বর তার অপারেশন হয়।
পলি খাতুনের পরিবারের অভিযোগ ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার ছেলে রুহুল আমিন অস্ত্রোপচারে অবহেলায় তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে এবং এর জন্য সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার সিরাজী শফিকুল ইসলামকে দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আজ সোমবার রুহুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, 'অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে আম্মু বলছিলেন খুব ভয় লাগছে। আমি তাকে সাহস দিয়ে বলি ভয় পেয়ো না, তোমার কিছুই হবে না, তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু আম্মুর ভয়ই সত্যি হলো। আম্মুর মৃত্যু হলো। তাকে দেওয়া কোনো কথাই রাখতে পারিনি'।
তিনি বলেন, আম্মুর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল থেকে একটা কমিটি করা হয়েছিল সেই কমিটি আমাকে দুদিন ডেকেছিল আমি আমার তথ্য উপাত্ত সেখানে উপস্থাপন করি। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কিন্তু সেই প্রতিবেদনে কি এসেছে তা আমাকে জানানো হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি নিয়ম মেনে হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিএমডিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কেউই কিছু জানাচ্ছে না। আমার মায়ের অপারেশনের ধাপে ধাপে অনিয়ম হয়েছে ছেলে হিসেবে আমি মায়ের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই।
অপারেশনের ১ মাস ৭ দিন পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি রফিকুন্নাহারের মৃত্যু হয়। এই পুরো সময়টাতে রফিকুন্নাহার সুস্থ হননি এবং তার শরীরে কোনো রেসপন্স আসেনি। রুহুল আমিন জানান, ৪ ঘণ্টার অপারেশন শেষে আম্মুকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হলেও তিনি আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেননি। এভাবেই ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকার পর মারা যান। আম্মুর অপারেশন থেকে শুরু করে সামগ্রিক চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল চিকিৎসকদের। তাদের বারবার কাকুতি মিনতি করেও আম্মুর সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে পারিনি। চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণেই আম্মু মারা যান’
তার অভিযোগের পর হাসপাতাল থেকে ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কাজী মহিবুর রহমানকে সভাপতি করে একটা তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটিকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. কাজী মহিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু এটা সেন্সেটিভ বিষয় তাই আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আমরা তদন্ত রিপোর্ট হাসপাতালের পরিচালক বরাবর জমা দিয়েছি।
হাসপাতালের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ডা. জহিরুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা সবসময় চেষ্টা করেন রোগীকে সুস্থ করার। হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিবেদন নিয়ে কখনো প্রশ্ন উঠেনি। তাদের অভিযোগের বিপরীতে যে কমিটি গঠন হয়েছিল তারা তাদের কাজ করেছেন। এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।