মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ঢাকার রাস্তায় ভিড় মৌসুমি কসাইদের

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম

রাত পোহালেই মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় প্রধান উৎসব ঈদুল আজহা যা কোরবানির ঈদ হিসেবেও সমাদৃত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানির ঈদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা কোরবানি দেবেন তারা ইতোমধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী গরু ছাগল কিনে রেখেছেন কেউ কেউ আজ শেষরাত পর্যন্ত কিনবেন। আগামীকাল সোমবার ঈদের জামায়াত শেষে পশু কোরবানি দেবেন তারা।

কোরবানির গোসত কাটাকাটি করতে শেষ শেষ মুহূর্তে শান দেওয়া হচ্ছে দা-বঁটি, ছুরিতে। ভিড় জমেছে রাজধানীর কামারপাড়াগুলোতে। তবে সব প্রস্তুতি ম্লান হয়ে যেতে পারে কসাইয়ের অভাবে। কেননা রাজধানীতে চাহিদার তুলনায় নেই পর্যাপ্ত কসাই। তাই কসাইদের অভাব পূরণ করতে ঈদকে কেন্দ্র করে মাঠে নামেন মৌসুমি কসাই অনেকেই যাদের নাম দিয়েছেন এক দিনের কসাই।

রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মৌসুমি কসাইদের জটলা বেঁধেছে। ঢাকার অলি গলি পেরিয়ে,  বড় বড় বিপণি বিতান ও ব্যস্ত এলাকাগুলোতে কসাইদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এই কসাইদের একটা বড় অংশ এসেছে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে। তারা বাড়তি আয় ও মাংসের আশায় ঈদের আগের দিন রাজধানীতে জবাইয়ের কাজ পেতে ছুটে এসেছেন।

মৌসুমি কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তারা এ পেশায় থাকেন না। তখন তাদের কেউ রিকশা চালায়, সবজি বিক্রি করে কিংবা ভ্যান চালায়, নতুবা দিনমজুর, নিরাপত্তারক্ষী, নৈশপ্রহরী, হকারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ঈদের এই ছুটিতে তাদের কাজ না থাকায় ও কসাইয়ের কাজ করে বাড়তি ইনকামের আশায় তারা হয়ে গেছেন মৌসুমী কসাই। যারা কোরবানি দেবেন তারাও রাস্তায় বেরিয়েছেন কসাইদের খুঁজে। দর দাম করে তারা চুক্তি করছেন কসাইদের সঙ্গে। জবাই ও মাংস কাটাকুটি থেকে শুরু করে বণ্টনের চুক্তিতে তারা কাজ দিচ্ছেন।

তারা জানান, গরুর দাম ও ওজন অনুযায়ী তারা কসাইয়ের কাজ পাচ্ছেন। গরুটি ঠিক কতো টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে কসাইরা তাদের মজুরি ঠিক করে নেন। আবার অনেকে গরুর সাইজ ও ওজন দেখেও মূল্য নির্ধারণ করেন। প্রতি হাজার টাকার গরুর বিপরীতে তারা মজুরি নির্ধারণ করছেন ১২০ থেকে ২০০ টাকা করে। গরুর সাইজ ছোট হলে তারা মজুরি বেশি নিচ্ছেন, আর বড় হলে মজুরি কম নিতে রাজি হচ্ছেন।

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় দেখা মিলল একদল মৌসুমী কসাইয়ের। তারা এসেছেন উত্তরের জেলা রংপুর থেকে। এই দলের নেতা তহুর আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, রংপুর থেকে এবার ঢাকায় প্রায় ৩০০ কসাই ঢাকায় এসেছে। আমার দলে রয়েছে ১৫ জন সদস্য। বড় গরু পেলে ২টি ও ছোট গরু পেলে ৩ টি দলে আমরা ভাগ হয়ে কাজ নেব। আজ সকালেই ঢাকায় এসে নামছি। ঈদের দিন সন্ধ্যায় আবার রংপুর চলে যাব। গত ৫ বছর ধরে আমি নিয়মিত ঢাকায় কসাইয়ের কাজ করতে আসি।

রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় কথা হয় আজিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটা বাসায় দারোয়ানীর কাজ করি। প্রতিবছর ঈদের আগে ২ দিনের ছুটি নিয়ে কসাইয়ের কাজ করি। এবার ছুটি নিতে হয়নি বাসার এক স্যারের গরু কাটার কাজ পেয়েছি। সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে স্যার গরু কিনেছেন হাট থেকে, হাট থেকে গরু আনতে আমিও গিয়েছিলাম। তখন স্যারকে বললে স্যার আমাকে গরু জবাই ও মাংস কাটাকুটির কাজ দেন। সব মিলিয়ে ৪৭ হাজার টাকা পাব এ কাজ করে।

তিনি বলেন, টাকা একটু হয়ে গেছে কিন্তু সমস্যা নেই নিজের বাসা তো। কাজ খোঁজার ঝামেলা নেই। আরও ৫ জনকে চুক্তিতে নিয়েছি। তাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা আমার।

রাজধানীর বিহারি ক্যাম্পের সামনে আড্ডা ছোট ছোট জটলা করে আড্ডা জমিয়েছেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে তারা লক্ষ্য করছেন কোনো গাড়ি থামছে কী না। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকেই এখানে বসে আছেন কসাইয়ের কাজের আশায়। আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা কোরবানি দিচ্ছেন তাদের সন্ধানে এখানে আসেন এবং কসাইয়ের কাজের জন্য অগ্রিম দিয়ে যান।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে একটা অংশ কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না। কেননা তারা বছরের পর বছর একই মালিকের গরু কাটার কাজ পান। মালিকরা গরু কেনার আগেই তাদের ফোনে জানিয়ে দেন।

ক্যাম্পের বাসিন্দা মধ্যবয়সী আখতার বলেন, আমি ২০ বছর ধরে ঈদের সময় কসাইয়ের কাজ করি। গত ৪ বছর ধরে পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীর গরু কাটার কাজ করছি। এবারও তার বাসায় কাজ পেয়েছি। এই ক্যাম্পের বেশীরভাগ যুবকই কোরবানির ঈদের সময় কসাইয়ের কাজ করে। এতে অন্য যেকোনো কাজের তুলনায় বেশি কাজ করে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন এবার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। তবে তিনি এখনও কসাই খুঁজে পাননি। তিনি বলেন, সকাল থেকে কসাই খুঁজছি, এর মধ্যে ২ টা গ্রুপের সঙ্গে কথা হয়েছে কিন্তু তারা বেশি টাকা চায়। কসাই তো পাওয়া যায় না, আমার মতো আরও অনেকেই কসাই খুঁজছেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত