বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন করলেন শিক্ষকরা

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ঐক্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তারা চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, হামলা, মামলা ও নির্যাতনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক ও হঠাৎ কেন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো তারও সমালোচনা করেন তারা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নির্বাহী ক্ষমতা বলে এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছতে পারবে কি না তার কোনো দায়-দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিচ্ছে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ বোধ না করছেন, তাদের এখানে নিরাপদে রেখে খাদ্য এবং অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব। এটা শুধুমাত্র প্রক্টরিয়াল বডি ও উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয় না। এটা সকল শিক্ষক এবং সব শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। এক শেখ হাসিনা বা এক প্রশাসন পবিবর্তন করে, আরেক শেখ হাসিনা বা প্রশাসনকে নিয়ে এলে সেখানে বাংলাদেশের বিশেষ কিছু হয় না। এজন্য আমাদের অবকাঠামোগতভাবে দেখে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা বলেন, কাউকে চিহ্নিত না করে রাজাকার বলার অধিকার প্রধানমন্ত্রী কেন, কারোর নাই। রাজাকার যদি কাউকে বলতে হয় তাহলে তালিকা তৈরি করতে হবে। তালিকা তৈরি না করে, যেই বিরোধিতা করবে তাকেই রাজাকার ট্যাগ দেওয়া হবে এটা আমরা মানি না এবং ছাত্র সমাজও মানে না। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা শিক্ষকরা বছরের পর বছর যে মুখ খুলতে পারি নাই, হাসিনার নাম নিয়ে কিছু বলতে পারি নাই ছাত্ররা প্রথম এই কাজটা করলেন এবং যুগে যুগে বাংলাদেশে তাই হয়েছে।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইনসাফের পক্ষে যেই রাষ্ট্র এবং সমাজের সুবিচার নেই, সেই রাষ্ট্র এবং সমাজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি শুধুমাত্র ইনসাফের জায়গা থেকে। আমরা সকলের জন্য সুবিচার ও মর্যাদা চাই। যারা এটার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন, তারা জানেন না তারা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুবিচার থেকে বঞ্চিত করছেন। আজকে যারা সুবিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস রাখে, তারা এই সময়ের মুক্তিযোদ্ধা। এখন একাত্তরে ফিরে গিয়ে আবার মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার হওয়ার সুযোগ নেই। এই সময়ে মানুষের অধিকারের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছে, তারা প্রত্যেকে মুক্তিযোদ্ধা। আর মানুষের অধিকার হরণের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছে তারা প্রত্যেকেই রাজাকার।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিটিউটের অধ্যাপক মোহা. হাসনাত আলী, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. ছাইফুল ইসলাম, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না প্রমুখ। কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রশাসনের বাধা

এদিকে মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা একদল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রশাসনের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পাশে দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ এবং কয়েকজন সহকারী প্রক্টর। এক পর্যায়ে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’, ‘দালাল’, ‘দালাল’ স্লোগান। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে মানববন্ধনে অংশ নেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সেখানে উপস্থিত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এ সময় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে কোনো ঝামেলা না হওয়ার শর্তে সেখান থেকে চলে আসেন প্রশাসনের ব্যক্তিরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত