বর্তমানে বদলাচ্ছে আবহাওয়ার গতিবিধি। কখনও তীব্র গরম আবার কখনও হঠাৎ বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট। আর এরকম আবহাওয়াতে বেড়ে যায় রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ। ঘরে ঘরে দেখা দেয় জ্বর-ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা।
এছাড়া এরকম আবহাওয়াতে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণও বেড়ে যায়। দেখা দেয় সংক্রামক জীবাণু বাহিত নানা রোগ। ডায়রিয়া ও আমাশয় অন্যান্য অসুখের মতো নানা ধরনের পেটের অসুখও বেশি হয়। দূর্বল হয়ে পরে শরীর।
আর তাই এরকম আবহাওয়াতে নানা ধরণের রোগবালাই থেকে সতর্ক থাকতে হবে। চলুন জেনে নেই হঠাৎ গরম-হঠাৎ বৃষ্টিতে সুস্থ থাকায় কিছু উপায়।
বৃষ্টি থেকে সাবধান
আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়ে বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সক্রিয়তা বাড়ে। চিকিৎসকরা বলেন, ঋতুবদলের সময়ে জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি হয়। সর্দিকাশির অ্যাডিনোভাইরাসের পাশাপাশি রাইনোভাইরাস বা রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু-র মতো সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ে।
এছাড়া জ্বর, সর্দিকাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ জ্বালা, চোখে সংক্রমণ এই সময়ে ভোগাতে পারে। আর এসবের শংকা বেড়ে যায় বৃষ্টির পানিতে ভিজলে। তাই বৃষ্টি থেকে দূরে থাকতে হবে। কোনভাবে ভিজে গেলেও ঘরে ফিরেই প্রথমে ভেজা জামাকাপড় পাল্টে ভাল করে গোসল করে নেওয়া উচিত।
মশা থেকে দূরে
প্রতি বছরই এ সময়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। আর এ বছরেও এই রোগগুলোর, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে বহুগুণ। আর তাই মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের। মশার কামর থেকে বাঁচতে সবসময় বড় হাতা জামা, ভাল করে শরীর ঢাকা পোশাক পরা উচিত বলছেন তাঁরা।
আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে। বাসার আশেপাশে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আর সবসময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।
পরিষ্কার পানি পান
হঠাৎ গরম-হঠাৎ বৃষ্টির এ মৌসুমে শরীরে পানির চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু গলা শুকিয়ে গেলে যেখানে সেখানে রাস্তায় বিক্রি হওয়া পানি পান না করাই শ্রেয়। এসব পানিতে জীবাণু বেশি থাকে, যার কারণে পেটের রোগ বেশি ছড়ায়। আর তাই এ মৌসুমে রাস্তা থেকে কেনা খাবার, পানি, শরবত ইত্যাদি না খাওয়াই উচিত।
রাস্তার পানি বেশিরভাগই দূষিত হয় যার কারণে। আমাশয়, ডায়েরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড জাতীয় রোগ বেশি হয়। আর সাধারণ পেটের সমস্যা হলে স্যালাইন খাওয়া উচিত। সমস্যা যদি বেশি হয়, তা হলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অনেকেরই অভ্যাস রাস্তার দোকান থেকে ভাজাভুজি বা বাইরের খাবার খাওয়া। কিন্তু এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর বলছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে এরকম আবহাওয়ায় এসব খাবারের মাধ্যমে খুব দ্রুত জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, যার ফলাফল পেটের অসুখ কিংবা মারাত্মক ডায়রিয়া।
চিকিৎসকরা বলেন, এই সময়ে বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। ফাস্ট ফুড একদমই না। ঘরের হালকা খাবার এই সময়ে খুবই উপকারী। মাল্টিভিটামিনে ভরা পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু জাতীয় ফল, পর্যাপ্ত পানি পান করলে এই ধরনের সংক্রমণ আটকানো যেতে পারে।
মাস্ক পরুন
অসুখ যা-ই হোক, চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই ওষুধ খাওয়া উচিত। তবে এরকম আবহাওয়াতে বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা খুবই জরুরি বলছেন চিকিৎসকরা। বাইরে মানুষের ভিড়ে জীবাণু সংক্রমণ ঠেকাতে গেলে মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরলে সংক্রামক অসুখবিসুখ থেকে অনেকটা সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।