শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বুরকিনা ফাসোতে ভয়াবহ হামলা, কয়েক ঘণ্টায় গুলি করে ৬০০ জনকে হত্যা

  • সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে বাঁচতে বিশাল পরিখা খনন করছিলেন বারসালাঘোর বাসিন্দারা
  • সে সময়ই কয়েক ঘণ্টায় গুলি চালিয়ে ৬০০ জনকে হত্যা করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী জেএনআইএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ পিএম

সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়েছে আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো। দেশটিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুলি চালিয়ে ৬০০ জনকে হত্যা করেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট একটি জঙ্গিগোষ্ঠী।

নিহতদের সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং বেশিরভাগই নারী ও শিশু। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ভয়াবহ এ গণহত্যার তথ্য তুলে ধরেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে বুরকিনা ফাসোর বারসালোঘো শহরে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি-গোষ্ঠী জামায়াত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিম (জেএনআইএম) এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

সিএনএন জানায়, সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বারসালাঘোর বাসিন্দারা প্রতিরক্ষামূলক পরিখা খনন করছিলেন। এই সময়ই সন্ত্রাসীরা মোটর সাইকেলে করে গ্রামটিতে প্রবেশ করে হামলা চালায় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৬০০ জনকে হত্যা করে। নিহতদের প্রায় সবাইই নারী ও শিশু।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় হত্যাকাণ্ড। সিএনএনে তদন্তে উঠে এসেছে যে, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট এই জঙ্গি গোষ্ঠী ২০১৫ সালে মালি থেকে বুরকিনা ফাসোতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই দেশটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

ফ্রান্স সরকারের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সিএনএন জানাচ্ছে, জেএনআইএম-এর হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। যাদের সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তবে জাতিসংঘের অনুমান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় ২০০ জন নিহত হয়েছে।

তবে হত্যাকারী গোষ্ঠী জেএনআইএমের দাবি, তারা দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর ৩০০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। নিহতদের কেউই বেসামরিক নয়।

তবে হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, সেনাবাহিনীর নির্দেশ অনুযায়ী বারসালাঘোর শহরের চারপাশে একটি বিশাল পরিখা খনন করছিলেন তারা। সে সময়ই জেএনআইএমের বন্দুকধারীরা হামলা চালায়।

বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি সিএনএনকে জানান, ঘটনার দিন শহরের বাইরে ৪ কিলোমিটার দূরে একটি পরিখা খননকাজে ছিলেন। সেনাবাহিনী এই পরিখা খনন করাচ্ছিল। সকালে প্রায় ১১টার দিকে প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি।

তিনি বলেন, ‘পালানোর জন্য হামাগুড়ি দিয়ে পরিখায় যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি দেখেন যে হামলাকারীরা পরিখাটি অনুসরণ করছে। পরে তিনি হামাগুড়ি দিয়ে পরিখা থেকে বের হন এবং একটি ঝোপের নিচে বিকেল পর্যন্ত লুকিয়েথাকেন। তিনি জানান, ‘পরিখার মধ্যে যে পথটুকু আমি পাড়ি দিয়েছি পুরো পথটিই ছিল রক্তাক্ত। সবাই চিৎকার করছিল।‘

হামলায় পরিবারের দুই সদস্যকে হারিয়েছেন এমন একজন সিএনএনকে জানান, “তারা সারাদিন মানুষ হত্যা করেছে। তিনদিন ধরে আমরা লাশ কুড়াচ্ছিলাম। চারিদিকে মরদেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। আমাদের অন্তরে ভয় ঢুকে গেল। দাফনের সময় মাটিতে এত লাশ পড়ে ছিল যে দাফন করা কঠিন ছিল।”

উল্লেখ্য, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি হলো বুরকিনা ফাসো। ২০১৫ সাল থেকে সাহেল অঞ্চলের এই দেশটি সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ হাজারে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত