মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পুলিশের সঙ্গে মাঠে কারা?

  • অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মী থাকতে পারে ধারণা বিএনপির
  • অটোরিকশা চালকদের প্রতিহত করার পোস্ট যুবদলের নেতাকর্মীদের
  • পুলিশের সঙ্গে কাউকে ডাকা হয়নি, যারা আসছে তারা এলাকাবাসী: ডিএমপি
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম

একটা সময় ছিলো পুলিশকে নিজেদের ক্যাডার বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে একটি রাজনৈতিক দল। আবার পুলিশের সঙ্গে থেকে বিরোধী পক্ষকে দমনোর জন্য হামলা ও মারধর করতো রাজনৈতিক দলটির নেতা কর্মীরা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু এই দৃশ্য বদলায়নি। পটপরিবর্তন হলেও দাবি আদায়ের কর্মসূচিকারীদের দমনে পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে এখনো দেখা যায়।

সম্প্রতি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালদের কর্মসূচি চলাকালে তাদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় কিছু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। দলীয় কোনো ব্যানারে না হলেও ধারণা করা যায় বর্তমান সরকারের অনুষঙ্গ বা সমর্থনকারী তারা।

গত শুক্রবার দুপুরে জুরাইনে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের সঙ্গে ও পেছনে থেকে একদল মানুষ রিকশা চালকদের ওপরে হামলা চালায়। তাদের হাতে ছিল লাঠি, ইট-পাথরসহ নানা কিছু। তারা পুলিশের সঙ্গে থেকে হামলা ও মারধরের মত ঘটনা ঘটিয়েছে।

জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের সংঘর্ষের বিষয়ে ডিএমপির শ্যামপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চালকদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এলাকার লোকজন আমাদের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে কে কোন দলের বা কারা কী করে বিষয়টি আমরা জানি না। এছাড়া কোনো এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে, আগুন জ্বালিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয় এমন কাজ করলে এলাকার মানুষ এমনিতেই ধাওয়া দেয়। এখানে কাউকে ডাকা হয়নি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে রিকশা চালকদের যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত ছিলো। এদের মধ্যে ওয়ার্ড যুবদলের নেতা, সমন্বয়করাও জড়িত। এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের তারা ধাওয়া দেন।

এদিকে জুরাইনে সংঘর্ষের ঘটনার দিন ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে মো. আশরাফুল খাঁন নামে একজন বলেন, ‘আমরা যারা এখানে এসেছি কেউ কোটিপতি না, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। পেটের দায়ে পরিবারের ভরন পোষণের জন্য অনেক ছাত্রসমাজ রিকশা চালায়।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে, যুবদলের শতাধিক নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছেন। সামনের সারির ১২ জনের মধ্যে ৬ জনের হাতে লাঠি রয়েছে। রিকশাচালকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা ঢুকে যানবাহ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে তাই রিকশা চালকদের সরিয়ে দিতে এমন মিছিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও ‘দ্য রিভিলিয়‘স টিম অফ জুরাইন’ নামে একটি ফেসবুক পেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাফিয়ান হৃদয় নামে একজন কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘৭ মিনিটে জুরাইন সড়ক কিলিয়ার’। হৃদয় যে ছবিগুলো শেয়ার করেন সেখানেও পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা যায়।

অন্য একটা ফেসবুক পোস্টে কামরুল হাসান সাইমুন নামে একজন লিখছেন, ‘তানভির আহম্মেদ রভিন ভাইয়ের নির্দেশে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার জন্য অটোরিকশা নামধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কদমতলী থানা যুবদল’। এই পোস্টে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে হলুদ পাঞ্জাবী পরা একজন হাতের ইশারা দিচ্ছেন গাড়ি চলাচলের।

জুরাইনে পুলিশের পাশে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা রিকশা চালকদের ধাওয়া ও মারধরের বিষয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু দেশ রূপন্তরকে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের বলা আছে ‘কোনো ধরনের লাঠিয়াল বাহিনী হওয়া যাবে না’।

জুরাইনে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেখানে এলাকাবাসী পুলিশের পাশে থেকে কাজ করেছে। সেখানে কয়েকজন নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। তবে তারা এলাকার বিশৃঙ্খলাকারীদের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখানে কোনো বাহিনী বা ক্যাডার হিসাবে কোনো নেতাকর্মী যায়নি। বিএনপি কখনো ছাত্রলীগ-যুবলীগের মত ক্যাডার বাহিনী নয়।

জুরাইনে পুলিশের পাশে থেকে কারা রিকশা চালকদের সঙ্গে সংঘর্ষ জড়িয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মাদ ছালেহ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সড়ক ও রেললাইন থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের সরিয়ে দিতে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসী ছিলো। এখানে অন্য কোন দল বা সংগঠনের কেউ ছিলো কি না আমার জানা নেই।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত