‘মাতৃহীনতার বেদনাই আমাকে কবি করে তুলেছে’ এক সাক্ষাৎকারে এমনই বলেছিলেন দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ৭৬ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জীবদ্দশায় তার মাত্র তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল তার। প্রথম বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ রাজনৈতিক ভাষা আর আবেগের মিশেলে প্রকাশের পরপরই তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। শৈশবেই মাতৃহারা ছিলেন বর্ষীয়াণ এই কবি। তার মতে, ‘মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স মাত্র তিন বছর। বোধবুদ্ধি, বিবেচনা তৈরি হয়নি। মাতৃবিয়োগটা সবচেয়ে বড় বেদনা। যে কোনো আত্মীয় মারা যাওয়াটাই বেদনার। তবে মায়ের মতো পরম আত্মীয় আর হয় না। এতো বড় বেদনা!’
তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ সেখান থেকেই শুরু। দুঃখ, বেদনা কিন্তু শুধু কান্নাকাটির বিষয় না। এটা উপভোগেরও বিষয় এবং এটা থেকেই শিল্প তৈরি হয়। ভালো ও মৌলিক শিল্প বেদনা থেকেই শুরু হয়। সে বয়সে বুঝতে পারিনি। যত বয়স বেড়েছে, এ বেদনা আমাকে গ্রাস করেছে, আচ্ছন্ন করেছে। মাতৃহীনতার বেদনা আমাকে কবি হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।’
মাতৃহীন শৈশব নিয়ে তিনি বলেন, ‘কৈশোর ও প্রথম যৌবনে আমার ঝোঁক ছিল খেলাধূলার দিকে। আমি ফুটবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিসও খেলতাম। যখন দশম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকে তখন থেকেই আমি কবিতা লেখা শুরু করি। কলেজে ওঠার পর মনে হলো আমি কবিতাই লিখবো।’
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) শাহবাগের সুপার হোস্টেলের ওয়াশরুমের দরজা খুলে তাকে পড়ে থাকতে দেখেন ওই হোস্টেলের অন্যান্যরা। তিনি ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। ওই হোস্টেলের আবাসিক বর্ডারদের একজন শিক্ষার্থী কনক সরকার। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, তিনি হেলাল হাফিজের পাশের রুমেই থাকেন। বলেন, ‘আমরা ৩০ মিনিট ধরে চেষ্টার পর দরজা ভেঙে দেখি উনি পড়ে আছেন। উনার মাথায় আঘাত লেগেছিল, রক্ত বেরিয়েছিল।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান বলেছেন, শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে হেলাল হাফিজ যে হোস্টেলে থাকতেন, সেখানকার লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।