দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উপস্থিতি নেই কেন? এমন প্রশ্ন করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের ছবির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে ‘ভারতের কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি’। আমি জানতে চাই এখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নেই কেন? তিনি বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেশবাসীর উদ্দেশে এ প্রশ্ন রাখেন। এ সময় সংস্কৃতি উপদেষ্টা জাতীয় জাদুঘরে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নানান উদ্যোগের কথা জানান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের ন্যারেটিভ বাংলাদেশের মানুষের ন্যারেটিভ এক নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, কিছুদিন আগে আমি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের ছবিটি দেখতে পেলাম। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ। এটি নিয়ে আমার নিজের মধ্যে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এটি আমাদের মুরব্বিদের ভুল। এতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
ফারুকী বলেন, গেল ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ’৭১ কে নিজেদের কুক্ষিগত করে ইতিহাস রচনা করেছে, যা ভুল ইতিহাস। অন্তর্বর্তী সরকার সেখান থেকে বের হয়ে জাতীয় জাদুঘরকে নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হবে জাদুঘরের মাধ্যমে; যাতে আগামীতেও কোনও সরকার এসে তা মুছে ফেলতে না পারে। এ প্রজন্মের কাছে জাতীয় জাদুঘরকে নতুন করে পরিচয় করানোর জন্য আধুনিকীকরণ করা এবং কাঠামোগত পরিবর্তন করা হবে জাতীয় জাদুঘরের।
জাদুঘরে জুলাই বিপ্লবের ঘটনা যুক্ত করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ। একজনকে কেন্দ্র করে ইতিহাস রচনা করেছে। যুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগ শুধু বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা বলেছে, এটা মারাত্মক ভুল। মুক্তিযুদ্ধে আরও অনেকের অবদান ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে মওলানা ভাসানী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদরা হারিয়ে গেছেন। আমরা রাজনীতির বাইরে গিয়ে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে চাই।
এদিকে জাতীয় জাদুঘরের চেয়ারম্যান হিসেবে স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা এ জাদুঘরকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আধুনিকায়ন করতে চাই। এ জন্য জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতিমান স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমকে নিয়োগ দিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।