সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সেদিন কী ঘটেছিল জানালেন মুক্তিযোদ্ধা কানু

আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত ও জুতার মালা পরিয়ে এলাকাছাড়া করার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। সেদিন কী ঘটেছিল সেই বিষয়ে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ফেনী শহরে ছেলের বাসায় আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগী এই মুক্তিযোদ্ধা বিস্তারিত জানান। 

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবদুল হাই কানু বলেন, ‘শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থবোধ করলে বাজারে গিয়ে পলাশের ফার্মেসিতে বসি। সেখানে ডায়াবেটিস-প্রেশার পরীক্ষা করার সময় আকস্মিক আবুল হাশেম মজুমদার এসে মোটরসাইকেল থেকে নেমে আমার গলা ধরে টান দেয়। পরে সে (হাশেম) বলে.... (অশ্লীল বাক্য) তোরে আজকে ছাড়া যাবে না, জীবনের শিক্ষা দিমু। তোরে আর তোর ছেলেরে টুকরো টুকরো করে ছিটিয়ে দিমু, যাতে কেউ খুঁজে না পায়। তুই এই এলাকা থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা। এভাবে টেনে ধরে আমাকে কুলিয়ারা স্কুলমাঠের দিকে নিয়ে যায়।’  

তিনি বলেন, ‘তখন আমি তাকে বলেছি, আমি কেন চলে যাব? গত ৯ বছর তো এলাকায় ছিলাম না। তারা আমাকে ৫টার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে। হাশেম বলেছে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দে, না হয় তোরে জবাই করে টুকরো টুকরো করব। ছুরি তো বসিয়েই দিয়েছিল। ওই ভিডিও এখনো পাননি, হয় তো কোনোদিন ছাড়বে, পাবেন। সাংবাদিকদের কাছে এ সত্য উদঘাটনের দাবি জানাব।’ 

তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের দ্বন্দ্বের কারণ দেখছিনা। আমার দোষ একটাই হয়তো, তা হলো আমি মুক্তিযোদ্ধা। তাদের কোনো নির্দেশ আছে কিনা জানি না। আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করি। তারা বিবস্ত্র করে আমার ছবি তোলার জন্য লুঙ্গি ধরে টানাটানি করেছে। আমার সঙ্গে এসব করে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা ও বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিচার সরকার ও জাতির কাছে চাইব।’ 

আবদুল হাই কানু বলেন, ‘আমি চোরের বিচার চাই। কিন্তু ভাল লোক ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটার বিরোধিতা করি। লুটতরাজের বিচার চাই। এ সরকারের সময়ে যদি ভাল লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তারা কোথায় দাঁড়াবে? আমি কোথায় দাঁড়াব?’

ভুক্তভোগী এ বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘আমার মতো এ বয়সের লোককে কেন মাঠে এমন করা হলো? কেন পায়ের নিচে দিল? কেন লাথি-ঘুষি দেওয়া হলো? কেন পানিতে চুবাতে বলা হলো? কেন জুতার মালা বানিয়ে গলায় দিল?’ 

এ সময় হাশেমের সঙ্গে ওহিদুর রহমান মজুমদার, রাসেল, নয়ন মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন ছিলেন বলে জানান তিনি। 

এদিকে ঘটনার দিন বিকেলে নিরাপত্তার কারণে বাড়ি ছেড়ে ফেনীতে চলে আসেন আবদুল হাই কানু। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সেখানেই ছেলের বাসায় বিশ্রামে আছেন। পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ফেরার কথা বলেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, গত রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করেন স্থানীয় কয়েকজন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত