সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান পরিসংখ্যান ক্যাডারদের

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দাখিল করা প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। তাদের মতে, এ সুপারিশ ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এছাড়া জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও পেশাদারী সিভিল সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে ৪ দফা দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বিদ্যমান সিভিল সার্ভিসসমূহ পুনর্বিন্যাসপূর্বক বিভিন্ন সার্ভিস ও এর কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হলেও, একমাত্র বিসিএস (পরিসংখ্যান)-ক্যাডারকে পুনর্গঠিত সার্ভিসসমূহের প্রস্তাবে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করা হয়েছে (সংযুক্তি ৮, পৃষ্ঠা ১৯১)।

দাখিলকৃত সংস্কার প্রস্তাবে ১৯৮০ সালে সৃজিত গুরুত্বপূর্ণ পেশাভিত্তিক এ ক্যাডার সার্ভিসকে ‘অস্তিত্বহীন’ করার মতো অদূরদর্শী সুপারিশ আমাদেরকে অত্যন্ত বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে বলে মনে করছে পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সকল বৈষম্য নিরসন ও গতিশীল জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টা এবং ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সাথে এ সুপারিশ সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

মূলত সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে বিবিএস-এ নিযুক্ত মেধাবী পরিসংখ্যানবিদদের সমন্বয়ে গঠিত এ সার্ভিসকে অবমূল্যায়ন করে আরেকটি নতুন বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দাবি অ্যাসোসিয়েশনের।

এতে আরও বলা, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এ সুপারিশ করার পূর্বে মূল স্টেকহোল্ডার হিসেবে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন কিংবা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো'র কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কোনো প্রকার মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন অনুভব করেনি।

এমনকি বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ হতে স্বপ্রণোদিত হয়ে লিখিত কতিপয় সংস্কার প্রস্তাব কমিশনে প্রেরণ করা হলেও তা আমলে না নিয়ে একতরফাভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী সিভিল সার্ভিসকে অস্তিত্বহীন করার মতো সুপারিশ করে একটি দায়সারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

তথ্য-উপাত্ত নির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় বিভিন্ন রাষ্ট্র যেখানে উত্তরোত্তর পরিসংখ্যান সার্ভিসকে আধুনিক ও শক্তিশালী করছে, সেখানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে পুনর্গঠিত সার্ভিসসমূহে অন্তর্ভুক্ত না করার প্রহসনমূলক প্রস্তাব উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। অধিকন্তু, বর্তমানে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার সার্ভিসে কর্মরত জনবলের ক্যারিয়ার প্ল্যান ও সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা প্রদান না করে এ কমিশন দায়সারাভাবে প্রতিবেদন দাখিল করেছে যা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। এরূপ প্রস্তাব জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা এবং বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস বলে মনে করছে অ্যাসোসিয়েশন।

ফলে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা একাত্মভাবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য একটি পেশাদারী পরিসংখ্যান সিভিল সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে ৪ দফা দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। দাবিগুলো হলো:-

১. পেশাদারী পরিসংখ্যান ব্যবস্থার স্বার্থে বিদ্যমান বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সার্ভিস হিসেবে পুনর্গঠন। 

২. জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কার ও অধিকতর জনমুখী করার লক্ষ্যে পৃথক ‘জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ গঠন।

৩. রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ অপসারণ করে জনগণের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে জাতীয় সংসদের নিকট দায়বদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’-কে পুনর্গঠন। 

৪. অবিলম্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রত্যাহার।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত