মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষের চেয়ারে বসতে বসতেই নাজমুল হোসেন শান্ত বললেন, ‘অনেক দিন পর’। আসলেই বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক লম্বা সময় পর এলেন গণমাধ্যমের সামনে। চোটের কারণে খেলা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে। দেশের মাটিতে বিপিএলে ফরচুন বরিশালের শিরোপা জয়ের অংশ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫টা। সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন প্রায় ৪ সপ্তাহ আগে। ওদিকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্বের প্রতিপক্ষ দলগুলো ব্যস্ত ওয়ানডে খেলতে। তারপরও নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে শিরোপা জয়েরই বিশ্বাস ধ্বনিত হলো বুধবার।
দিন দুই আগে, কোচ ফিল সিমন্স বলেছিলেন, ‘শিরোপা জয়ের বিশ্বাস না থাকলে আমি এই চেয়ারে বসতাম না।’ বুধবার শান্তও নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই যাচ্ছি।’ উজ্জীবিত করার জন্য বাণী হিসেবে চমৎকার। তবে একই সংবাদ সম্মেলনে যখন পুরনো সেই সুর অর্থাৎ ‘দিনটা আমাদের হলে, নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে আমরা যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারাতে পারি’ বলেন, তখন বোঝা যায় অধিনায়কের বিশ্বাস খুব সুদৃঢ় নয়। এ রকম নিজেদের ভালো দিন আর প্রতিপক্ষের খারাপ দিনের হিসাব দ্বিপাক্ষিক সিরিজের একটা দুটো ম্যাচে হতে পারে। কিন্তু আইসিসি ক্রিকেট র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ৮ দলের দ্বৈরথ, যেখানে আদতে হারলেই বিদায়, সে রকম আসরে এই সম্ভাবনার অঙ্ক আসলে বেমানান।
অধিনায়ক নিজেই ম্যাচ প্রস্তুতির অভাবে ভুগছেন। তার যুক্তি বিপিএলের একাদশে সুযোগ না পাওয়াতে বেশি বেশি অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বাস করছি ভালো অবস্থানে যাওয়া সম্ভব। ম্যাচ খেলতে পারিনি এখানেও ইতিবাচক দিক ছিল। নিয়মিত অনুশীলন করেছি। ফিটনেস নিয়েও কাজ করেছি। বিপিএলের সময়টা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। সব ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি টুর্নামেন্ট ভালো যাবে। অনেক দিন পর ম্যাচ খেলব। এখানে ম্যাচ সিনারিও প্র্যাকটিস হচ্ছে, আজও হবে। সামনে প্র্যাকটিস ম্যাচও আছে। এই ফরম্যাট ছোটবেলা থেকে খেলি। অ্যাডজাস্টমেন্টে সমস্যা হয় না।’ টি-টোয়েন্টির বিপিএল খেলে ৫০ ওভারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাওয়াটা ঠিক আদর্শ প্রস্তুতি নয়, এমনটাই বলেছিলেন কোচ সিমন্স। শান্তর দাবি কোচ আসলে এমন কিছুই বলতে চাননি, ‘কোচ এমন কিছু মিন করেছেন মনে হয় না। ফরম্যাট অনুযায়ী একটু তো ভিন্নতা আছেই। তবে যেভাবে ব্যাটাররা খেলেছে, উইকেট ভালো ছিল, যে কন্ডিশনে খেলব এর চেয়ে হয়তো ভালো উইকেট থাকবে। প্রস্তুতি ভালো নিয়েছেন ব্যাটাররা, লম্বা সময় খেলা জরুরি। ৫০-৬০ রানকে ১০০-১২০ করতে হবে। ম্যাচ সিনারিও প্র্যাকটিস হচ্ছে। প্রস্তুতির দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে আছি। হাতে আরও ৬-৭ দিন আছে, এই সময়ে আমরা আরও গুছিয়ে নিতে পারব।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই দলীয় ইনিংসের নিরাপদ দূরত্বের সীমানা আড়াইশ ছাড়িয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তো ৩০০ রান বহু আগেই অনিরাপদ। পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের রান উৎসব দেখে শান্তও বুঝতে পেরেছেন বাস্তবতা, ‘এ ধরনের টুর্নামেন্টে চ্যালেঞ্জ, বাড়তি চাপ থাকবেই। আমি আশা করছি পাকিস্তানে ৩০০+ উইকেট হবে। এ ধরনের স্কোর করতে হবে আগে ব্যাট করলে। ডিফেন্ড করার ক্ষেত্রেও এমন রান ডিফেন্ড করা লাগবে। দুবাইতে একেক সময় একেক রকম হয়। তাও আমার মনে হয় ২৬০-২৮০ এর ভেতরেই থাকবে। এভাবে সংখ্যা অনুমান করা কঠিন, তবে অতীত দেখলে এমনই থাকে। নির্দিষ্ট দিনে কত রান করা দরকার বা কত রানে আটকানো দরকার এসব অ্যানালাইসিস করব।’
ফরচুন বরিশাল দলে রিশাদ হোসেনকে একাদশে জায়গা দিতেই নাকি সরে দাঁড়িয়েছেন শান্ত? এই প্রশ্নের উত্তরে স্বীকার করেছেন সত্যতা, ‘আলহামদুলিল্লাহ রিশাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই, তবে আমাদের দেশে রিস্ট স্পিনার হিসেবে রিশাদ বেস্ট বোলার। আমাদের হাতে ওরকম অপশন নেই। ইদানীং যেভাবে খেলছে, বিপিএলেও ২-৩ ম্যাচ একাই জিতিয়েছে। খুব ভালো বোলিং, সঙ্গে ব্যাটিং, ফিল্ডিং তো জানিই। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, বিপিএলে যেভাবে ব্যাটিং বোলিং করেছে আমি খুবই খুশি। আশা আরও বেশি ছিল। তবে আমি খুশি। রাওয়ালপিন্ডিতে খেলা ক্রিকেটার দলে আছে। এই অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি কাজে দেবে। তবে নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলা জরুরি। ভালো ক্রিকেট খেললে যেকোনো দলকে হারাতে পারব।’
সামর্থ্যরে বিশ্বাসটা নড়বড়ে বলেই হয়তো শর্তসাপেক্ষে হারানোর কথা বলেছেন শান্ত। যে কথাগুলো তার পূর্বসূরি অনেকেই বলে গেছেন। সবশেষ দুটো আইসিসি আসরে, ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যা রিপোর্ট কার্ড, তাতে ৮ দলের আসর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বাংলাদেশ জিতে যাবে সেটা অলীক কল্পনার মতোই শোনায়। তবুও দিনশেষে ২২ গজে অবিশ্বাস্য অনেক কিছু হয় বলেই লোকে খেলাটা দেখে। তাই বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্নের কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ সেখানে দুটো ম্যাচ সেই রাওয়ালপিন্ডিতেই তো অসম্ভবকে সম্ভব করে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, এই শান্তরই নেতৃত্বে।