মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ 

ইন্টার্ন চিকিৎসক-শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতিতে ব্যাহত চিকিৎসা

  • ‘ডাক্তার’ পদবি-সংক্রান্ত রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
  • আগামীকাল রিটের শুনানির তারিখ
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৬ পিএম

পাঁচ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতি এবং ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন। রবিবার দেশের কয়েকটি হাসপাতাল ও কলেজে সকাল ৮টা থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। জরুরি সেবা ছাড়া ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীদের সেবাদান বন্ধ রেখেছেন।

এতে এসব হাসপাতালে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। একই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে যাননি শিক্ষার্থীরা। পাঠদান বন্ধ ছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা ও আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ‘ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ এসব তথ্য জানিয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন নবী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্রুত এসব দাবি পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে চিকিৎসকরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

এসব দাবির ব্যাপারে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন নবী বলেন, ‘এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ চিকিৎসক নন— এই আইনের বিরুদ্ধে যে রিট হয়েছে, এখন পর্যন্ত তার শুনানির তারিখ ৮৯ বার পিছিয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আদালতে চলমান ২৭৩০/২০১৩ রিটের রায়ের দিন ঘোষিত হয়েছে। আমরা চাই এ ২৫ ফেব্রুয়ারিতেই ১৩ বছর ধরে টানা ডাক্তার পদবি নিয়ে করা রিটের কার্যক্রমের অবসান হোক। রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

দাবিগুলো হলো— ১. ‘ডাক্তার’ পদবি-সংক্রান্ত রিট প্রত্যাহার, ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা। ২. উন্নত বিশ্বের মান অনুযায়ী ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ওষুধ (সাধারণ ওষুধ) আপডেট করা ও রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা। ৩. স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক সংকট নিরসনে দ্রুততম সময়ে শূন্যপদে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ এবং আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে চিকিৎসকদের ষষ্ঠ গ্রেডে চাকরির প্রবেশপথ তৈরি, প্রতি বছর চার-পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখা ও ডাক্তারদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করা। ৪. সব ম্যাটস প্রতিষ্ঠান (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) এবং মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা। এ ছাড়া সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) পদবি বাতিল করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদবির ব্যবহার চালু। এটি ডাক্তার শব্দের সমার্থক হিসেবে জনগণকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। ৫. ডাক্তারদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিধানে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে চিকিৎসা শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একযোগে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দেন।

এসব বিবৃতিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী’ উল্লেখ করে সেগুলো বাতিল করে দ্রুত চিকিৎসকদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে বসার হুঁশিয়ারি দেন তারা। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার থেকে কর্মবিরতি এবং ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী: সারাদেশের মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। কর্মবিরতির প্রভাবে রোগীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। ভর্তি হওয়ার পরপরই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে মিড ও সিনিয়র লেভেলের চিকিৎসকরা সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। জরুরি চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার চলমান আছে।

খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সকাল ৮টা থেকে এই কর্মবিরতি করছেন। এতে সকাল থেকে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) সভাপতি ডা. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করেছিল; যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও আত্মঘাতী। আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য খাতের বিপ্লবের জন্য ৫ দফা দাবি পেশ করেছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।’

এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে যাতে রোগীদের কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় এবং প্রত্যেক রোগী সুচিকিৎসা পায়, তার জন্য আমরা মিড লেভেলের চিকিৎসক যেমন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং অনারারি মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসারদের আরও কার্যকরভাবে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছি।’

গাজীপুর: গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নেমেছেন। গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা গাজীপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করেন।

চট্টগ্রাম: সকাল ৮টা থেকে চমেকের শিক্ষার্থীরাও ইন্টার্ন চিকিৎসক কাউন্সিলের আহ্বানে কর্মসূচি শুরু করেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক কাউন্সিলের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশের সব মেডিকেল কলেজের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পূর্ণাঙ্গ রায় ও ৫ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য চমেক হাসপাতালে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ: ম্যাটস শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে ক্লাস বর্জন করে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। যৌক্তিক পাঁচ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। কাল থেকে হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসে কমপ্লিট শাটডাউন করতে বাধ্য হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত