রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহর দাবিতে মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধ

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে করা ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদ এবং নিঃশর্তে এই মামলা প্রত্যাহার দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখায় উভয়পাশে প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পরিবহনের সাধারণ যাত্রীরা। 

সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করে। পরে দুপুর ১টায় মজমপুর রেলগেট ফেলে দিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা ও কুষ্টিয়া- ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে রাস্তায় অবস্থান নেন। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সকল শিক্ষক সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।

শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. রোকনুজ্জামান বলেন, কে বা কারা এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন তাদের খোঁজা হচ্ছে। সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক রাজনীতির হীন চক্রান্তে একটি কু-চক্রী মহল পুলিশের সাথে যোগসাজসে মামলাবাজির ব্যবসা করতেই এই মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে। এতে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত হচ্ছে। তারা কলেজ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে শিক্ষার মনোরম পরিবেশ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত রয়েছে। অবিলম্বে ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলার এজাহারনামীয় ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা মামলার নিঃশর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। নচেৎ এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং দাবি আদায়ের জন্য লাগাতার ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জান মোহাম্মদ জানু শেখের ছেলে শেখ সবুজ রহমান(৪০) নামের ব্যক্তি গত ৫ আগস্ট সাড়ে ৩টার সময় শহরের কোর্টপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া এই গুলিবর্ষণের হুকুম দাতা হিসেবে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ১৩ জন শিক্ষকসহ মোট ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে বাদি সবুজ রহমান কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জেরিনের অভিযোগ করে বলেন, কোথাকার কোন হোটেল বয় এই মামলার বাদী, যার সাথে আমাদের বা আমাদের স্যারদের কোনো পরিচয় বা চেনা জানা নাই, অথচ তাকে কী করে স্যারেরা হত্যার হুকুম দিল? 

আরেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন,মামলার এজাহার দেখলেই বোঝা যায় যে এটা একটা হাস্যকর মামলা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্যারদের সম্মানহানি ও হয়রানির মুখে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায়ের জন্যেই এই মামলা করানো হয়েছে। কুষ্টিয়ায় পুলিশের যোগাসাজসে একটি কু-চক্রীমহল ৫ আগস্টের স্পর্শকাতর ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মামলার আসামিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার মামলা বাণিজ্য করে যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোল্লা মো. রুহুল আমীন বলেন, মামলাটির মোটিভ থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে এখানে একটি মহলের প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে। একটি কু-চক্রী মহলের হীণ স্বার্থে এই নিন্দনীয় কাজটি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার কাণ্ডজ্ঞানহীন অদূরদর্শীতার কারণে হয়েছে। কলেজের ভাবমূর্তি ও শিক্ষা মনোরম পরিবেশ রক্ষা স্বার্থে এর একটা সুরাহার দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের। একই সাথে এ জাতীয় নিন্দনীয় কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন কলেজ অধ্যক্ষ।

কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, কারো বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তারা সংক্ষুব্ধ হতেই পারেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি আমরা খুব সতর্কতার সাথে দেখছি। পুলিশ চাইলে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা সুন্দর সমাধানে যাবেন। আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি। 

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নাই। মামলা হয়েছে এটা আদালতের বিষয়, আদালত থেকেই এর সুরাহা হতে হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত