হলুদ এশিয়া জুড়ে ঐতিহ্যবাহী ঔষধ এবং রান্নায় ব্যবহৃত একটি সুপরিচিত মসলা। হলুদের গুঁড়া রান্নাঘরে একটি সাধারণ উপাদান, তবে কাঁচা হলুদ পুষ্টি এবং জৈব সক্রিয় যৌগের আরও শক্তিশালী উৎস। কাঁচা হলুদ সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য কাজ করে।
আমরা দুই রকম হলুদ ব্যবহার করি—‘পাকা’আর কাঁচা। ‘পাকা’হলুদ মানে খাওয়ার হলুদ। সেটা তো রান্নায় ব্যবহার করা হয়, কিন্তু কাঁচা হলুদ গায়ে মাখা ছাড়া আর কীভাবে ব্যবহার করা যায়? কাঁচা হলুদ কিন্তু চা বানিয়েও খেতে পারেন। কিন্তু কেন? কারণ, এর আছে অনেক উপকারিতা। কাঁচা হলুদে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম, ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে। আর থাকে কারকিউমিন, যা বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের বাঁচায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে। এবার জেনে নিই, কাঁচা হলুদের গুণাগুণ এবং কেন আপনার খাবারের তালিকায় নিয়মিত কাঁচা হলুদ রাখবেন।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা হলুদে কারকিউমিন থাকে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ-বিরোধী যৌগ। কারকিউমিন রোগ প্রতিরোধক কোষের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়া হলুদের প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত শক্তি শোষণ এবং উপকারিতা সর্বাধিক করার জন্য মধু এবং গোল মরিচের সঙ্গে কুচি করা কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খান।
২. হজমশক্তি উন্নত করে
অনেক সময় আমাদের খাবার হজমের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কাঁচা হলুদ পিত্ত উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, হজমে সহায়তা করে এবং পেট ফাঁপা বা বদহজম প্রতিরোধ করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে প্রদাহ প্রশমিত করে, মসৃণ হজম নিশ্চিত করে। জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারকিউমিন পেটে ব্যথা এবং পেটফাঁপাসহ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম এর সমস্যা দূর করে। দৈনন্দিন রুটিনে কাঁচা হলুদ যোগ করলে অন্ত্র সুস্থ থাকে এবং ভালো হজমে সহায়তা করে।
৩. জয়েন্ট ভালো রাখে এবং প্রদাহ কমায়
বিভিন্ন কারণে জয়েন্টের ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়তে পারে, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। হলুদের শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ব্যথা উপশম করতে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা উন্নত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে তা জয়েন্টের অস্বস্তি মোকাবিলায় সাহায্য করে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের জন্য এটি একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার।
৪. ডায়াবেটিস কমায়
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত সকালে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না।
৫. ক্যানসার ঠেকাতে সাহায্য করে
হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তকণিকাকে নিরাপদ রাখে। ফলে স্তন ক্যানসার, পাকস্থলী, কোলন ও ত্বকের ক্যানসার তৈরি হতে পারে না।
৭. ক্ষত সারায়
কাঁচা হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন এবং আরও নানা সব অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যে কোনো ধরনের ক্ষতের যন্ত্রণা কমায়। এটা আঘাত সারাতেও দারুণভাবে কাজ করে। এ কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ক্ষতস্থানে অল্প পরিমাণে হলুদ বেঁটে লাগিয়ে দিলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।
৮. পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে
অনিয়মিত মাসিক রোধ, হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ–বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে হলুদের কারকিউমিন। এই উপাদান পিরিয়ডের আগে ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
৯. মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত সমস্যা রোধ করে
হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পার্কিনসনস, আলঝেইমার, টিস্যুর স্থবিরতার মতো অসুস্থতা রোধে সক্ষম। এটি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণ বাড়ায়। হতাশার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
১০. যকৃৎ সুরক্ষিত রাখে
হলুদ যকৃতের নানান রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। লিভারের বহুবৃদ্ধি, হেপাটাইটিস, সিরোসিস, গলব্লাডারের মতো সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।
১১. মাথা যন্ত্রণা সারায়
এখন থেকে মাথা যন্ত্রণা হলেই এক কাপ হলুদ মেশানো দুধ খেয়ে নেবেন। দেখবেন কষ্ট কমে গেছে। হলুদের অন্দরে থাকা কার্কিউমিন এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান শরীরের অন্দরে প্রদাহ কমায়। ফলে মাথা যন্ত্রণা কমতে সময় লাগে না।
১২. হজম ক্ষমতা বাড়ে
একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত হলুদ খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে বদহজমের আশঙ্কা যেমন কমে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বল এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।