ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়! দিনকয়েক আগেই শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক প্রদান নিয়ে যে সব তুঘলকি কাণ্ড হয়েছে, তাতে ঢাকা লিগ খেলতে মাঠে নামার আগেও আতঙ্কে আছেন ক্রিকেটাররা।
গতকাল শনিবার মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হয়ে গেল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। অংশগ্রহণকারী ১২ দলের অধিনায়ক বা প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চমৎকার আয়োজনে ট্রফি উন্মোচন পর্ব সমাপ্ত হলেও ক্রিকেটারদের হাতে মাইক্রোফোন যাওয়ার পর পরিবেশটা আর আনন্দঘন থাকেনি। কারণ বেশিরভাগ ক্রিকেটারই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পূর্ণাঙ্গ পারিশ্রমিক প্রাপ্তি নিয়ে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বেশ কিছু ক্লাব আগের মতো খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দিতে পারছে না, কারণ প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের হদিস নেই।
এসব কারণে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমে গেছে ঢাকা লিগে, এই নিয়ে দলবদলের সময় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তাইজুল ইসলাম-মোহাম্মদ মিঠুনের মতো লম্বা সময় ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে আসা ক্রিকেটাররা। কাল তামিম ইকবাল মনে করিয়ে দিলেন, কম হলেও সেটাও যেন সময় মতো ক্রিকেটারদের হাতে ওঠে, ‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে আমি মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেটের মেরুদণ্ড। এইবার দেশের পরিস্থিতিটা একটু আলাদা। বিপিএল বলেন, ডিপিএল বলেন, সব দিক থেকেই ক্রিকেটাররা আর্থিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই খেলোয়াড়রা সবাই যেন সময় মতো তাদের প্রতিশ্রুত অঙ্কের টাকা পায় এটাই আমার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে অবশ্যই চাই যে ক্রিকেটটা ভালো হোক। আম্পায়ারিং যেন ভালো হয়, ম্যাচগুলো যেন ভালো হয়, তবে আবারও বললাম আমার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব হচ্ছে খেলোয়াড়রা যেন প্রতিশ্রুত অঙ্কের পুরোটাই পায়।’
মাঠে আবাহনী ও মোহামেডান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও টাকাকড়ির ব্যাপারে দুই দলের অধিনায়কেরই অভিন্ন সুর! আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতেরও একই আশঙ্কা, ‘ক্রিকেটাররা এবার অনেক ত্যাগ স্বীকার কারেছে। যে পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা, সেখান থেকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ টাকা ঠিক করা হয়েছে, অন্তত সেই পরিমাণটুকু যেন সবাই পায়।’
টাকা-পয়সার ব্যাপারে উপস্থিত বেশিরভাগ দলের অধিনায়ক বা প্রতিনিধিরই একই সুর। মাঠের খেলা, আম্পায়ারিং, উইকেট সবকিছু ভালো হওয়ার পাশাপাশি দেশের বেশিরভাগ পেশাদার ক্রিকেটারের আয়ের মূল উৎস ঢাকা লিগের প্রতিশ্রুত অর্থগুলো যেন ক্লাব কর্তারা খেলোয়াড়দের দিয়ে দেন। এতেই বোঝা যায় দেশের ক্রিকেটের মেরুদ- কতটা শক্তিশালী! আর সেই মেরুদন্ডের জোরে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো শীর্ষসারির দলগুলোর কথা না হয় বাদই রাখা গেল, আফগানদের চেয়েও পিছিয়ে পড়েছে পূর্ব-পাকিস্তান আমল থেকেই ক্রিকেট খেলে আসা বাংলাদেশ।
এবারের আসরে অবশ্য গুণগত কিছু পরিবর্তন এসেছে। টাইটেল স্পন্সর হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ আর রিমার্ক-এর টাইলক্স ব্র্যান্ডের পরিষ্কারক সামগ্রী যুক্ত হয়েছে। এবার থেকেই ঢাকা লিগের সবগুলো ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার হবে টি-স্পোর্টসে। বিকেএসপি ও মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচগুলোর সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে, সেই সঙ্গে থাকবে আম্পায়ার ডিসিশন রিভিউ পদ্ধতিও। আন্তর্জাতিক ম্যাচের মতো হক আই, বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি হয়তো ব্যবহৃত হবে না তবে নিজস্ব একটি রিভিউ পদ্ধতি রাখছে ক্রিকেট কমিটি ফর ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম), জানিয়েছেন সিসিডিএম প্রধান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
আবাহনী, মোহামেডান, ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ... এসব চেনা নামের সঙ্গে এবারে নতুন মুখ গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। যে দলের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম। নতুন একটা দল নিয়ে বড় মঞ্চে নিজেকে চেনানোই তার লক্ষ্য। এই ক্লাবের মালিকানায় যুক্ত আছেন তামিম ইকবালও। এভাবে একটি ক্লাবের মালিকানায় থেকে আরেক ক্লাবের হয়ে খেলা যায় কি না এই নিয়ে উঠেছে প্রশ্নও। ৩ মার্চ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী আর প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের আরেকটি মৌসুম। বিকেএসপিতে একটি ভেন্যুতে মোহামেডান খেলবে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে, অন্য ভেন্যুতে প্রাইম ব্যাংকের প্রতিপক্ষ রূপগঞ্জ টাইগার্স। ম্যাচ শুরু সকাল ৯টায়।