মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

আইনের প্রয়োগ নেই বেহাত রাজস্ব

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৪ এএম

১৯৮৪ সালের অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী দেশের যেকোনো কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা বা যেকোনো অনুষ্ঠান করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অতিথি যদি ১০০ জনের কম হয়, তাহলে সরকারকে কোনো ধরনের রাজস্ব দিতে হয় না। তবে এর বেশি হলেই জনপ্রতি ২৫ টাকা করে রাজস্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানছে না। এমনকি অনুষ্ঠানের অনুমোদনও নেওয়া হয় না।

এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার প্রধান নির্বাহী আবুজার গিফরি তেমন কিছু জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ‘কেউ অনুমতির জন্যই আসে না, রাজস্ব দেওয়া তো দূরের কথা। এ রকম আইন জেলা প্রশাসকের অফিসে থাকতে পারে। আমাদের আছে কি না খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’

ফেনীতে গত এক বছরে (২০২৪ সালে) ৯ হাজার ৮৫৩টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিয়েতে গড়ে তিন শতাধিক অতিথি অংশ নেয় বলে কমিউনিটি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক অসংখ্য অনুষ্ঠান শতাধিক অতিথি নিয়ে ঘরোয়া ও কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হলে হয়ে থাকে।

ফেনী সদর কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাঈদ খান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সরকারকে ভ্যাট দিয়ে থাকি। অতিথির সংখ্যা ও করের বিষয়টি অনুষ্ঠান কর্র্তৃপক্ষ দেখবে।’

সরেজমিন স্মৃতি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দুপাশে দুটি বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক অতিথি আপ্যায়ন হচ্ছে। অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী কনের বাবার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ১০০ অতিথির বেশি হলে জনপ্রতি ২৫ টাকা করে রাজস্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে জানালে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। ফেনী গ্র্যান্ড সুলতান কমিউনিটি সেন্টার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল জানান, প্রতিনিয়ত নানা রকম অনুষ্ঠান হলেও কেউ রাজস্ব দিতে এবং নিতে দেখিনি।

জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় ১৯৮৪ সালের ৩০ আগস্ট অতিথি আইন চালু করে। ওই তারিখে সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১০০ জনের অধিক অতিথি আপ্যায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসন বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিটি, পৌর প্রশাসকের লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। ১০০ জনের অতিরিক্ত প্রতিজনের জন্য ২৫ টাকা হারে আপ্যায়ন ফি জমা দিতে হবে। এ আইন অমান্যকারীকে অতিরিক্ত প্রতিজন অতিথির জন্য ১০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। আপ্যায়নকারী ওই জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্টের ১৯১৩-এর আওতায় সার্টিফিকেট মামলা করার বিধান রয়েছে। আইন অমান্যকারীর কাছ থেকে শাস্তিমূলক মাশুল আদায় এবং আইন প্রয়োগের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্র্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত সব গেজেটেড কর্মকর্তার মত প্রদান করা হয়।

২০০২ সালের ৮ এপ্রিল এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিয়ে, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ১৫০ জন পর্যন্ত অতিথি বিনা মাশুলে আপ্যায়ন করা যাবে। ১৫১ জন থেকে এক হাজার পর্যন্ত মাথাপিছু ২০ টাকা ও তদূর্ধ্ব ক্ষেত্রে মাথাপিছু ১০ টাকা হারে মাশুল ধার্য করা হয়েছে। এ আদেশ অমান্যকারীকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা করা হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে উল্লিখিত বিভাগগুলোর প্রতিনিধি সমন্বয়ে কমিটি থাকবে। তবে ওরস, ধর্মসভা, চেহলাম ও শ্রাদ্ধের ক্ষেত্রে এ আদেশ কার্যকর হবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়। তবে আইনটির প্রয়োগ না থাকায় প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হারাচ্ছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ আইনটি থাকলেও তার কার্যকারিতা বা প্রয়োগ নেই। আমরা শিগগিরই আইনটি পড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত