সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

পাঁচ শতাংশ এককালীন পরিশোধে এক্সিট সুবিধা

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৪ এএম

ঋণ থেকে মুক্ত হতে এক্সিট (বন্ধ) পলিসিতে বড় ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় খেলাপি গ্রাহকরা এখন মাত্র ৫ শতাংশ এককালীন পরিশোধ (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে তিন বছরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন, যা গত ৮ জুলাই জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ছিল মোট ঋণের ১০ শতাংশ। বিদ্যমান ঋণস্থিতির ন্যূনতম ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধ করে এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্তির আবেদন করবে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক এ ধরনের আবেদন নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের সুযোগ পাবে। আর নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট ঋণ কোনো অবস্থাতে সেই পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করার সুযোগ পাবেন না গ্রাহক।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অনেক গ্রাহক তাদের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কিংবা বিরূপ আর্থিক অবস্থায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, কিংবা খেলাপি হয়ে যায়। নতুন এই সুবিধার মাধ্যমে খেলাপি গ্রাহকরা ব্যাংকগুলোর থেকে এককালীন বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। কিংবা ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের মাধ্যমে সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে একাধিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন। ব্যাংকের তারল্যপ্রবাহ অব্যাহত রাখা ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে এই নীতিমালা জারি করা হয়েছে। আর এক্সিটের আওতায় ঋণ আদায় ও সমন্বয়ের কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকগুলো এক্সিটের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মানদ- অনুসরণ করছে। তাই এমন নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই সার্কুলার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই নীতিমালার আওতায় সব ধরনের ছোট-বড় গ্রাহক সুবিধা পাবেন। এতে ব্যাংকের নিয়মিত কিংবা খেলাপি গ্রাহকও এক্সিট পলিসির মাধ্যমে সুবিধা নিতে পারবেন। এই নীতিমালাটি দীর্ঘদিন পরিকল্পনাধীন ছিল। এত দিন একেক ব্যাংক একেক নিয়ম অনুসরণ করত। এখন নির্দিষ্ট নীতিমালা করা হয়েছে, যার কারণে নির্দিষ্ট সীমার বেশি সুবিধা কোনো গ্রাহক পাবেন না।

নীতিমালার সাধারণ নির্দেশনায় বলা হয়, এ নীতিমালা এক্সিট প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মানদ- হিসেবে বিবেচিত হবে। এ নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলো এক্সিট-সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হবে। ব্যাংক কর্তৃক প্রণীতব্য নীতিমালায় প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত শর্তাদির চেয়ে নমনীয় কোনো শর্ত যুক্ত করা যাবে না। ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ এরূপ বিরূপমানে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অথবা নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে প্রকল্প বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত ঋণের এক্সিট সুবিধা দেওয়া যাবে। বিদ্যমান ঋণস্থিতির ন্যূনতম ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধ-পূর্বক এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্তির আবেদন করতে হবে।

ঋণগ্রহীতার আবেদনপ্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটি কর্তৃক এক্সিট সুবিধা অনুমোদিত হতে হবে। তবে মূল ঋণ অনূর্ধ্ব ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত এক্সিট সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর অর্পণ করা যাবে, যা আগে ছিল ১০ লাখ। এ ছাড়া মওকুফযোগ্য সুদ পৃথক ব্লকড হিসেবে স্থানান্তর করতে হবে এবং সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের পর ব্লকড হিসেবে রক্ষিত সুদ চূড়ান্ত মওকুফ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এক্সিট সুবিধার আওতায় এক বা একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। একাধিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিশোধসূচি প্রণয়ন করতে হবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সাধারণভাবে দুই বছরের অধিক হবে না। তবে পরিচালনা পর্ষদ যুক্তিসংগত কারণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ আরও এক বছর সময় বৃদ্ধি করতে পারবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত