মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

নেতৃত্বের পুনর্নির্মাণ: ফ্রান্সের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৬ পিএম

সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে যাওয়ায়, ম্যাক্রো এবার ইউরোপকে একটি স্বতন্ত্র সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ম্যাক্রো দৃষ্টিতে ইউক্রেন সংকট শুধুই একটি যুদ্ধ নয়, বরং ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য একটি বড় পরীক্ষাও বটে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নীতিগত পিছু হটার ফলে ইউরোপ এখন নতুন নেতৃত্ব খুঁজছে, এবং ফ্রান্স সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসতে চাচ্ছে। সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হলো ফ্রান্সের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কৌশলে পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এটি একদিকে ইউরোপের প্রতিরক্ষা শক্তিকে বাড়াতে পারে, অন্যদিকে পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

প্রশ্ন উঠছে— যেখানে শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের কৌশলগত হুমকি কি আদৌ যৌক্তিক? ম্যাক্রো ২০৩০ সালের মধ্যে সামরিক বাজেট ৩০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—কোনো নতুন কর আরোপ ছাড়া। এই হিসাব কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

ম্যাক্রোর নতুন কৌশল অনেকটা ‘আত্মরক্ষা ও নেতৃত্বের মিশ্রণ’ হলেও আফ্রিকার বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। নাইজার, মালি ও বুরকিনা ফাসোর মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে ফরাসি সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে আফ্রিকায় ফ্রান্সের ঐতিহ্যগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জরুরি বৈঠকে ৮০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ঘোষণা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এতে বোঝা যাচ্ছে, ইউরোপ আর কেবল মার্কিন সামরিক ছায়ায় থাকতে চায় না। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কতটা সফল হবে—তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ড সামরিক ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে জোর দিয়েছেন। কিন্তু ইতিহাস বলছে, জার্মান সামরিক পুনরুত্থান ইউরোপের জন্য সংবেদনশীল একটি বিষয়। ফলে এই পদক্ষেপ একদিকে প্রতিরক্ষার চাহিদা মেটালেও, অন্যদিকে বাড়াতে পারে রাজনৈতিক উত্তেজনা।

ম্যাক্রোর বক্তব্য রাশিয়া ইতোমধ্যে ‘প্ররোচনামূলক হুমকি’ হিসেবে দেখেছে। মস্কোর বার্তা স্পষ্ট—ফ্রান্স যদি আক্রমণাত্মক পারমাণবিক কৌশল গ্রহণ করে, তাহলে রাশিয়াও কঠিন জবাব দেবে। ফলে ইউরোপীয় কৌশল শুধু আত্মরক্ষার বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যতের সংঘাতেরও পূর্বাভাস হয়ে উঠতে পারে।

ম্যাক্রর নেতৃত্বে ইউরোপ কি সত্যিই সামরিকভাবে আত্মনির্ভর হতে পারবে, নাকি এ এক নতুন জটিলতার সূচনা? ইউক্রেন সংকট, অর্থনৈতিক চাপ, এবং পারমাণবিক উত্তেজনার মাঝে দাঁড়িয়ে ইউরোপ এখন এক নতুন মোড়ে যার পরিণতি শুধু সময়ই বলে দিতে পারবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত