বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, কোনো সুনির্দিষ্ট সরকার নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাই চীনের নীতি। একইভাবে চীনের জনগণও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস (সিএ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এদিকে জরিপের ফলাফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন। আর নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন প্রায় ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তি এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জরিপটি চালানো হয়।
জরিপ প্রতিবেদনের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, ৫ হাজার ৩৩৫ জন জরিপে অংশ নিয়েছেন। জরিপে ৬০ শতাংশ লোক মনে করেন, চীনের বৈশ্বিক রাজনীতি উন্নয়নকেন্দ্রিক। জরিপে ওঠে এসেছে, উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ লোকের প্রথমেই মনে আসে চীনের কথা। আর ৫৩ শতাংশ লোক চীনে গিয়ে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার নামে চীনা ঋণের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৪২ শতাংশ লোক মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন সামান্য মাত্রায় কাজ করছে।
এ নিয়ে সেন্টার ফর অলটারনেটিভস ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শিরোনামে তৃতীয়বারের মতো এ জরিপ চালাল।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর প্রসঙ্গে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীন পরস্পর পরীক্ষিত বন্ধু। ঐতিহ্যগতভাবেই সব দেশের সরকারপ্রধানকে চীন সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।’
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট সরকার নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাই চীনের নীতি। একইভাবে চীনের জনগণও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়।’
বাংলাদশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠবে বলে আশা রাখি।’
চীনা গণতন্ত্র নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রতিটি দেশের গণতন্ত্রের নিজস্ব ধরন আছে। আমাদেরও সেটা আছে। তবে আমাদের গণতন্ত্র জনগণের জন্য।’
রোহিঙ্গা বিষয়ে ইয়াও ওয়েব বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই। চীন এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সরকার ও এথনিক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছে। সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্প্রদায়েরও যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের (সিএ) নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রাক্তন রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘যারা চীনের প্রতি আগ্রহী, তাদের এই জরিপ খুব কাজে লাগবে। জরিপে বাংলাদেশ-চীনের দ্বিপক্ষীয় ক‚টনীতি, রাজনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার চীন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি বাড়াতে হবে। তবে দুই দেশের মধ্যে ভাষাশিক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।’
অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।