ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ওয়ালিয়া ফাযিল মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল মুহাম্মাদ মাঈনুদ্দীন খোন্দকার ও শিক্ষক আহমদ উল্যাহসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ লোপাট ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন সাবেক সহ-সভাপতি ড. বেলাল উদ্দিন আহমেদ।
আজ বুধবার বিকেলে ফেনী শহরের একটি রেস্তোরায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগে ড. বেলাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, গভর্নিং বডির অনুমোদনহীন ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন, বিশেষ প্রকাশনা থেকে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ, দাতা সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্তি জন্য ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ৪ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ টাকা জমা দিলেও তাদের দাতা সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরে ড. বেলাল উদ্দিন জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে বিনা রশিদে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন নামে ভর্তি ফি, সেশন ফি, মিলাদের চাঁদা পরিক্ষার ফি, টিউশন ফি, নানান খাতে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে যার কোনো হিসাব কমিটিতে উপস্থাপন বা অনুমোদন নেওয়া হয় নাই। আবাসিক-হোটেলে ছাত্রদের রেখে ছাত্রদের থেকে আবাসিক ফি আদায় করা হয় যার সঠিক হিসাব কমিটিতে উপস্থাপন বা অনুমোদন নেওয়া হয় নাই। শিক্ষক নিবাসে কয়েকজন শিক্ষক থাকে যারা সপরিবারে বসবাস করে যা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের নিজেদের সুবিধা মত ন্যায্য ভাড়ার অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম।
তিনি জানান, গ্যাস বিল ব্যবহারকারীদের থেকে আদায় না করে মাদ্রাসার হিসাব থেকে পরিশোধ করা হয় এবং অর্ধেক টাকা ব্যবহারকারীদের থেকে আদায় করে গ্যাসের বিল পরিশোধ করা হয়। নির্মাণ কাজের ভুয়া ভাউচার উপস্থাপন করে হাজার হাজার টাকা লুটপাট করা হয়েছে। মাদ্রাসার শ্রেণি কক্ষে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবসা কয়েকজন শিক্ষক নিয়মিত করে যাচ্ছে। বারবার কমিটির মিটিংয়ে প্রাইভেট পড়ানো নিষেধ করার পরও ছাত্র-ছাত্রীদের ভোর বেলা থেকে প্রাইভেট পড়ানোর কার্যক্রম চালিয়ে যায়। যা প্রিন্সিপাল মুহাম্মাদ মাঈনুদ্দীন খোন্দকার যোগদান করার আগে ছিলো না। শিক্ষকরা শ্রেণি কক্ষে না পড়িয়ে তাদের প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবসা জমজমাট রেখেছে। করোনাকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট বিনা ফি তে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে অ্যাসাইনমেন্টগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেন প্রিন্সিপাল মুহাম্মাদ মাঈনুদ্দীন খোন্দকার ও শিক্ষক আহমদ উল্যাহ।
তিনি জানান, গভর্নিং কমিটির সাবেক সদস্যরা এই সকল অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদ করায় এবং গভর্নিং কমিটির মিটিংয়ে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের নজরে বিষয় গুলো উপস্থাপন করার কারণে সাবেক কমিটির উপর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার সাবেক কমিটির আরও ৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তিনি মাদ্রাসার আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং অবৈধ ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে অবিলম্বে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মাঈনুদ্দীন খোন্দকারের মোবাইলে ফোন করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক বিদ্যেৎসাহী সদস্য মো. ফজলুল করিম স্বপন, এটিএম কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, মোহাম্মদ নুরুল আফসার, অভিভাবক প্রতিনিধি মোহাম্মদ মুসা, মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. নুরুল আমিন সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।