মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

রিয়াদ-মুশফিকদের মাঠ থেকে অবসর না নেওয়াতে বিসিবির দোষ দেখেন না সুজন

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ খেলে জাতীয় দলকে বিদায় বলেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। হাতে ছিল ফুলের তোড়া, চোখে জল ছলছল করলেও মুখে হাসি। তার দুই বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে একইভাবে বিদায় নেন মোহাম্মদ রফিকও। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও তারাই রয়ে গেছেন বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনা।

সাম্প্রতিক সময়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার সংস্কৃতি কি আদৌ কখনো দেখা যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পাঁচ তারকা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ইকবাল—যারা দলকে এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাদের জন্য মাঠ থেকেই বিদায় নেওয়া প্রাপ্য ছিল বলে মনে করেন খালেদ মাহমুদ।

জাতীয় দল থেকে মাঠে বিদায় নেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকা মাহমুদ বলেন, 'ওদের ক্যারিয়ারটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিশাল এক অর্জন। মাঠ থেকে অবসর নেওয়াটা ওদের প্রাপ্য ছিল। যারা ওদের সমর্থন দিয়েছে, যারা ভালোবেসেছে, তারাও চেয়েছিল করতালির মধ্যে ওরা বিদায় নিক। কিন্তু সেই সুযোগটা আমাদের হলো না। কেন ওরা মাঠ থেকে অবসর নেয়নি, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে।'

অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঠ থেকে অবসর নিতে পারেন না বোর্ডের (বিসিবি) সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। তবে খালেদ মাহমুদ এ ধারণার সঙ্গে একমত নন।

তিনি বলেন, 'আমি যখন অবসর নিয়েছিলাম, তখন নিজেই বলেছি এটা আমার শেষ ম্যাচ। কিন্তু কেউ যদি না জানায়, তাহলে বোর্ড কীভাবে বুঝবে? ক্রিকেটাররা যদি আগেই বলে যে শেষ সিরিজে বিদায় নেবে, তাহলে বোর্ডও সংবর্ধনার আয়োজন করতে পারে। এখানে বিসিবির কোনো দোষ নেই।'

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এরপর মুশফিক ওয়ানডে থেকে আর মাহমুদউল্লাহ সব ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তবে সময়ের বিচারে সিদ্ধান্তটি যথার্থই মনে করেন খালেদ মাহমুদ।

তিনি বলেন, 'ওরা চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন খেলতে পারত। তবে কতটা লাভ হতো, বলা কঠিন। মাঠ থেকে বিদায় নিলে হয়তো আরও স্মরণীয় হয়ে থাকত। গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে হাততালির মধ্যে বিদায় নেওয়াটা ওদের প্রাপ্য ছিল।'

বাংলাদেশ দলে দীর্ঘদিন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এখন তাদের শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে খালেদ মাহমুদ বলেন, 'ওদের অভিজ্ঞতা কেউ কিনতে পারবে না। ওরা ধাপে ধাপে নিজেদের গড়ে তুলেছে। হঠাৎ করেই ১০০% বিকল্প পাওয়া সম্ভব নয়। তবে আমাদের দলে প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে, যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা নিতে পারবে।'

তামিম ইকবাল জাতীয় দলে আর না খেলার ঘোষণা দিয়েছেন, মাশরাফীর ফেরা প্রায় অসম্ভব, আর সাকিবের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। কিন্তু তাদের কেউই মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেননি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি মাঠ থেকে অবসরের সংস্কৃতি গড়ে তুলবে? নাকি এখনও সেটি কেবলই দূরদৃষ্টির কল্পনা হয়ে থাকবে? সময়ই দেবে তার উত্তর।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত