বেসামরিক বিমানে চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) পদোন্নতি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। অনেকেই তথ্য গোপন করে সুবিধাও নিতে চাচ্ছেন। সর্বশেষ সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলীর পদটি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অপরাধী বা দুর্নীতিবাজ হওয়ার পরও তাদের পদোন্নতি ও নিয়োগ দিতে কেউ কেউ মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষের দিকে। তাকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দিতে বেবিচকের বোর্ড সভায় তার সম্পর্কে তথ্য গোপন করে সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানতে পেরে কৈফিয়ত চেয়েছে বলে বেবিচকের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। বোর্ড সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি মাসের ৩ তারিখে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, বোর্ড সভায় বেবিচকের কর্মকর্তারা নিজস্ব মতামত দিয়েছেন। বেশিরভাগ সদস্যই সভায় জানান, প্রধান প্রকৌশলী পদে হাবিবুর রহমানকে কোনোভাবেই প্রধান প্রকৌশলী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া সমীচীন হবে না। কারণ হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চারটি গুরুতর মামলা চলমান রয়েছে। মামলা নম্বরগুলো হলো: (ক) ৮২/২০২৫, (খ) ৮৩/২০২৫, (গ) ৮৪/২০২৫ এবং (ঘ) ৮৫/২০২৫।
এই মামলাগুলো রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮২০ কোটি টাকার সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা বেবিচকের চারটি মেগা প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প পিডি ছিলেন। আয়নবায়ান কর্মকর্তা হিসাবে ১৫০ কোটি টাকা অগ্রিম বিল প্রদান করেন। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে আয়নবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে ২১২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল প্রদান করেন/যাহা দুদকের মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে। প্রকল্পগুলো থেকে হাবিবের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট প্রায় ৮২০ কোটি টাকা লুটপাট করেছেন বলেও দুদক মামলার এফআইআর এ উল্লেখ করেছে।
প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল থাকলে তিনি মামলার আলামত নষ্ট করতে পারেন এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন, যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে, তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া আইন পরিপন্থী।
দুদকের মামলা থাকার পরও হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী করা প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সে সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, দুদক তদন্ত করছে এরকম একজন ব্যক্তিকে কোনোভাবেই পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী করা ন্যায় সঙ্গত হয়নি। যারা তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
তার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশন রিট পিটিশন (নং-২৬১৬/২০২৫) দাখিল করা হয়েছে। এবং হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তিনি ৮ জন গুরুত্বপূর্ণ আসামি মামলা থেকে যেন রেহাই পায়, সেই লক্ষ্যে মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ, তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট হাবিবের মাধ্যমে নষ্ট করে দেওয়া কিংবা গায়েব করে দেওয়া হতে পারে। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর যোগাযোগ রয়েছে।
অথচ তাকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশে এসব মতামত উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান বেবিচকের এক কর্মকর্তা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সভায় বেবিচকের মাত্র দুইজন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তাকে অনেকটা ‘ফেরেশতা’ আখ্যায়িত করে সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। অথচ বোর্ড সভায় অন্য সদস্যদের তথ্যগুলো গোপন রাখা হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানতে পেরে কৈফিয়ত চেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মামলার আসামি হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে রাখার জন্য তারা মরিয়া। এই সব বিষয়গুলো তদন্ত করে হাবিবুর রহমানের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহ পাবে।
সিএএবির নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রধান প্রকৌশলী পদ পূরণ করা যায়, সেক্ষেত্রে অবৈধ পায়তারা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরেক প্রকৌশলী মো. শহীদুল আফরোজের বিরুদ্ধে একটি মামলা দুদকে চলমান আরেক প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেনকে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ/পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে। তিনি একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ প্রকৌশলী। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। প্রকৌশলী শুভাশীষ বড়ুয়াকে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ/পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে। তিনি একজন যোগ্য এবং পরিশ্রমী প্রকৌশলী। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। অথচ হাবিবুর রহমানকে নিয়োগ দিতে মরিয়া বিশাল একটি সিন্ডিকেট।