বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছে মোহাম্মদ হাসান। তবে পরিবারের অস্বচ্ছতা আর ছোট ভাইয়ের দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তার সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলছে। ভাইয়ের চিকিৎসা খরচ আর পরিবারের হাল ধরতে ২য় বর্ষে পড়া হাসানকে এখন ছাড়তে হবে পড়াশোনা। বইতে হবে অসহায় পরিবারের ভার৷ কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসান বারবার মূর্ছা করছিলেন। তার হাতে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার কোনো উপায়ই অবশিষ্ট নেই বলে জানান তিনি। তবে কারও সহযোগিতা পেলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান হাসান।
মোহাম্মদ হাসানের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের চরপাতা গ্রামে। ছয় ভাই বোনের এর মধ্যে হাসান তৃতীয়। দুই বোনেরই বিবাহ হয়েছে। বড় ভাই পরিবারের খোঁজ নেন না। হাসান তার ছোট ভাই মোমিনের (১৯) টাকায় পড়াশোনা চালাতো। হাসানের সবচেয়ে ছোট ভাই ফোরকান (১৫) দশম শ্রেণিতে পড়তো। কিন্তু পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে সেও এখন পড়ালেখা ছেড়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। বাবা মো. হিরণ মিয়া একজন দিনমজুর।
জানা যায়, হাসানের বাবা ডায়বেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত থাকায় কাজ করতে পারে না। তাই পরিবারের কথা চিন্তা করে হাসান দশম শ্রেণি পাস করার পর তার ছোট ভাই মমিনকে (১৯) নিয়ে ঢাকা চলে যায়। করোনাকালীন সময়ে তারা দুই ভাই গার্মেন্টসে চাকরি করে। কিন্তু গার্মেন্টসে চাকরিকালীন সময়ে হাসানের মন পড়ে থাকে লেখাপড়ায়। তাই ছোট ভাইকে গার্মেন্টসের চাকরিতে রেখে সে এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নেয়। বাবার স্বপ্ন পূরণে একাগ্রতার সঙ্গে পড়ালেখা এগিয়ে যায়। ফলে সাফল্যের সঙ্গে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়। পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয় তার। এদিকে তার ছোট ভাই মোমিন গার্মেন্টসে চাকরি করে হাসানের পড়ালেখার খরচ ও সংসার চালায়। কিন্তু হাসান ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার এক বছর পরই গার্মেন্টসে চাকুরিরত মোমিন ক্লোন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়। এরপরই হাসানের পরিবারে নেমে আসে কালো ছায়া। টাকা অভাবে ছোট ভাইকে চিকিৎসা করাতে না পারায় পরিবার এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালাতে তার বাবা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়েছে। কিন্তু তাতেও যথেষ্ট না হওয়ায় অবশেষে শেষ সম্বল ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে মমিনের পুরোপুরি সুস্থ হতে তিন থেকে চার লাখ টাকা প্রয়োজন। এদিকে গত এক বছর ধরে তার পরিবারে কোনো রোজগার না থাকায় পরিবারটি পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে।
মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমার পরিবারের ইচ্ছে ছিল আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। আমি জানি না এখন আমার কি করা উচিত? আমার ছোট ভাইয়ের কিছু হয়ে গেলে আমার মা-বাবাও হয়ত আর নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারবে না। এদিকে মানসিক চাপে আমার পড়ালেখা ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। আমি পড়তে চাই। সঙ্গে পরিবারকেও রক্ষা করতে চাই। তাই দেশবাসীর কাছে আমার অনুরোধ আপনারা যদি একটি বাবার স্বপ্ন, একটি জীবন ও একটি পরিবারকে পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেন তাহলে আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
হাসানের সহপাঠী নাজমুল ইসলাম বলেন, হাসানের ভাই মোমিন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মোমিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় পরিবারের উপার্জন ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। হাসান মোমিনের উপার্জন দিয়েই পড়াশোনা চালাত। হাসানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। সে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত ভাইয়ের জন্য ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।
তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। চিকিৎসা খরচ নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। এখন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। আমরা প্রথমদিকে তাকে সাহায্য করেছি কিন্তু এখন বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন।
লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাহান বলেন, আমরা বিভাগ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে তার পরিবারের ভার বহন করতে হবে। তার ভাইয়ের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। সর্বোপরি তার জন্য এখন খুব বড় একটা সাপোর্ট প্রয়োজন।