জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মধ্যে সাত শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সাবেক দুই শিক্ষার্থীর সনদ ছয় মাসের জন্য সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে এদিন বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়।
এ সিদ্ধান্তগুলো অভিযুক্তদের যে দিন থেকে সাময়িক বহিষ্কার (১৯ সেপ্টেম্বর) করা হয়েছিল, সেদিন থেকে গণনা করা হবে।’ সে হিসেবে ১৯ মার্চ অর্থাৎ আজ বুধবার অভিযুক্তদের বহিষ্কারাদেশ ও সনদের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে৷
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাজন মিয়া, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ সালমান, বায়োটেকনোলজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুজ্জামান আতিক, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাহমুদুল হাসান রায়হান এবং ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এছাড়া এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই সাবেক শিক্ষার্থীর সনদ ছয় মাসের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তারা হলেন- সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ এবং অর্থনীতি বিভাগের ৩৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ভূঁইয়া।
এছাড়া এই সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সংশোধিত এজাহার দাখিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, শামীম মোল্লা মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রাথমিক প্রক্টরিয়াল তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রশাসনিক সভা থেকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কৃতদের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটনার মতো কোনো রকম কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণ সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির কাছে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। প্রাথমিকভাবে শামীম মোল্লার মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশুলিয়া থানায় যে মামলা দায়ের করেছিলো সেখানে শামীম মোল্লাকে আঘাত করার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে গুরুতর আঘাত করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো আশুলিয়া থানা কর্তৃক এফআইআর দায়েরের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা উল্লেখ করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যার বিষয়টি যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা এই রিপোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং বক্তব্যের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশের ধারা ৩ এর ২(খ) অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এই আদেশ পূর্বে দেওয়া সাময়িক বহিষ্কার আদেশের সময় থেকে কার্যকর হবে।
সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, শামীম মোল্লার ঘটনায় যাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা বর্তমান শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। জড়িতদের যাদের ছাত্রত্ব আগেই শেষ হয়েছিল, তাদের একাডেমিক সনদ ছয় মাসের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলো অভিযুক্তদের যে দিন থেকে সাময়িক বহিষ্কার (১৯ সেপ্টেম্বর) করা হয়েছিল, সেদিন থেকে গণনা করা হবে। সে হিসেবে ১৯ মার্চ তথা আগামীকাল বুধবার অভিযুক্তদের বহিষ্কারাদেশ ও সনদের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে৷
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে একদল শিক্ষার্থী পিটুনি দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের প্রায় দুই ঘণ্টা পর শামীম মোল্লা মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা যায়।
ওইদিন রাতেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আটজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং মামলা দায়ের করে প্রশাসন। ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের পর সোমবার দিবাগত রাতে অভিযুক্তদের মধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ছয় মাসের বহিষ্কার এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের ছয় মাসের জন্য একাডেমিক সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।