গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবৈধ কারখানায় অবাধে তৈরি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। ওই কারখানা থেকে অনবরত ছড়াচ্ছে বিষাক্ত অদৃশ্য গ্যাস। এতে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জনজীবন। দ্রুত নিষিদ্ধ পলিথিনের এ অবৈধ কারখানাটি উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী, কারখানা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেশে পলিথিন উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়নি। এ সুযোগে কয়েক মাস আগে কালিয়াকৈর পালপাড়া এলাকায় জাহাঙ্গীর ও আলমগীরদের জমি ভাড়া নিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবৈধ কারখানা গড়ে তুলেছেন বহিরাগত আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি।
তিনি পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাটি চালাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন জমির মালিক জাহাঙ্গীর আলম। আর এভাবেই সেখানে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। ওই অবৈধ কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করা হয়।
এসব পলিথিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পলিথিন তৈরির কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন প্লাস্টিক। প্রথমে পুরাতন প্লাস্টিক ও কনটিনসহ বিভিন্ন ভাঙ্গারি আসবাবপত্র থেকে পলিথিন তৈরির কাঁচামাল উৎপাদন করা হয়। পরে ওই কাঁচামালগুলো গলিয়ে পলিথিনে রূপান্তর করা হয়। আর এই কাজ সম্পূর্ণ করতে সৃষ্টি হয় এক অদৃশ্য ক্ষতিকর গ্যাসের। এসব পুরাতন প্লাস্টিক রিসাইক্লিন করায় ব্যাপকভাবে বায়ু দূষণ হয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। যা জনজীবনের জন্য খুবই ঝুঁকি।
ওই অবৈধ কারখানার পলিথিন তৈরির গন্ধে শ্বাস-প্রশ্বাস, চর্মরোগ, লিভার, কিডনি ড্যামেজসহ সৃষ্টি হতে পারে মরণঘাতী ক্যান্সারেরও। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধা ও গর্ভবতী নারীরা। ওই এলাকার বেশিরভাগ লোক হিন্দু-সম্প্রদায় হওয়ায় তারা ভয়ে কিছু বলতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে এই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। যা এই কৃষি প্রধান দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়াও ডাস্টবিনে ফেলা এসব পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার মানুষ ছাড়াও বিপুলসংখ্যক পশুপাখিসহ জলজপ্রাণীও।
স্থানীয় অখিল চন্দ্র, মঞ্জুরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, সেলিম রেজা, আবির জানান, ওই অবৈধ কারখানায় অবাধে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করায় পরিবেশ নষ্টসহ এলাকার লোকজনের ক্ষতি হচ্ছে। এখানে বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তারা কিছু করতে পারছেন না। ফলে পলিথিন তৈরির অদৃশ্য ক্ষতিকর গ্যাসের সাথে যুদ্ধ করেই নিজেদের মানিয়ে নিয়ে জীবন-যাপন করছেন শিশুসহ এখানকার মানুষ। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, দূষণ রোধে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানাটি অচিরে বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কাগজপত্র না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে কারখানার মালিক আবুল কালাম জানান, পলিথিনের ব্যাগ সব জায়গায়ই চলে। সারাদেশেই পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে আমিও করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, ওই নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানার খবর পেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে আমরা ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অচিরেই অভিযান চালিয়ে ওই নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা উচ্ছেদ করা হবে।