সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সংস্কার উদ্যোগে এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০৯ এএম

সরকার নানা ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বাচনী ইশতেহার দেবে, সেখানেও এসডিজি বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। আর এবার সরকার যে স্বপ্রণোদিত জাতীয় পর্যালোচনা (ভিএনআর) প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা সে প্রতিবেদনে জোরালোভাবে আসতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এর আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। মূল প্রবন্ধে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসডিজির মূল দর্শন হচ্ছে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। এই মূল দর্শন মাথায় রেখে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয় মূল প্রবন্ধে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে পুরোপুরি সফল হতে না পারলেও এটির বাস্তবায়নের উদ্যোগ চলমান রাখা আবশ্যক বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি মনে করেন, ২০৩০ সালে এসডিজির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এর এজেন্ডাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা তারপরও জীবন্ত থাকবে।

সমাপনী অধিবেশনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সমাজে আগে দেখা না গেলেও এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা সংখ্যায় বেশি না হলেও তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এ কণ্ঠস্বরের মোকাবিলায় উদারনৈতিক সমাজের পক্ষের মানুষদের সোচ্চার হতে হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘তারা সংখ্যায় বড় না। কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এ কণ্ঠস্বর মোকাবিলা করতে হলে সর্বজনীন মানবাধিকারের ভিত্তিতে যে উদারনৈতিক বহুত্ববাদী সমাজের কথা আমরা বলি, তার পক্ষের মানুষকে সোচ্চার হয়ে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ সময়কালে আমরা সবচেয়ে বড় আন্দোলন করলাম দেশ বৈষম্যবিরোধী হবে, কিন্তু আমরা কি সব বৈষম্যের কথা বলি? আমরা তো সব বৈষম্যের কথা বলি না। আমরা কোনো বৈষম্যের কথা বলি, কোনো বৈষম্যকে এড়িয়ে যাই।’

এ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘নারী ও পুরুষের বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে আমি তো লিঙ্গবৈচিত্র্যের কথা বলি না। আমি যখন জাতীয়তার প্রশ্নে কথা বলি, তখন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির কথা তো বলি না। যে সময়কালে আমরা নতুন আত্মস্বীকৃত জাতীয় সত্তাকে অনুসন্ধানে নেমেছি, তখন আমি বহুত্ব বা বহু ধরনের মানুষ নিয়ে যে আমাদের বাংলাদেশ, সেটার কথা তো সেভাবে মনে করি না।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নারীর সব সুরক্ষার কথা কি আমরা বলি? তার আইনি সুরক্ষা বা আইনি উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কি আমরা সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারি? কারণ হলো যে জিনিসটা আগে সে রকমভাবে ছিল না, এখন এসেছে। একধরনের নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব কেউ কেউ নিয়েছেন।’

ঘরে নিরাপদে বসে থেকে অন্য কেউ পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এমন ভাবনাকে বোকামির নামান্তর বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমি নিরাপদে থাকব ঘরে আর আমার পক্ষে মানুষ পরিবর্তন করে দেবে, আবার ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করবে, এটা মনে করা বোকামি হবে। প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’

বাংলাদেশে প্রয়োজনভিত্তিক উন্নয়ন থেকে অধিকারভিত্তিক উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে বলে অভিমত দেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। তিনি বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে আছি এভাবে না ভেবে, আমাদের কোন কোন অধিকার আদায় না হওয়ায় পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ বলেন, ‘আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত