মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিমের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিক চৌধুরী মানিক (২৬) হত্যা মামলার বাদীকে চিনে না ও বাদী সম্পর্কে কিছুই জানে না পরিবারের লোকজন। এতে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে নিহত ছাত্রদল নেতার লাশ উত্তোলেনে আপত্তি জানিয়েছে স্বজনরা। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেছে। পরে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে গেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত শাহরিকের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে রামগোপালপুর এলাকার ডেপুটি বাড়ি মসজিদসংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে নিহত ছাত্রদল নেতার লাশ উত্তোলনে আসেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাহরিক হত্যায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইমের উইংস মো. শফিকুল ইসলাম। তাদের আসার খবরে সেখানে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হন। এ সময় বাদীকে না চেনা ও তার সম্পর্কে না জানার কারণ দেখিয়ে পরিবারের লোকজন ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানান। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।
নিহত শাহরিক চৌধুরী মানিক মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকার আনিসুর রহমান চৌধুরীর ছেলে। শাহরিক মিরকাদিম পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব। চব্বিশের ৫ আগস্ট সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা শাহরিক চৌধুরী মানিক।
নিহত ছাত্রদল নেতা শাহরিকের বাবা আনিসুর রহমান চৌধুরী জানান, তার ছেলে হত্যার ঘটনায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেই মামলার বাদীকে তারা চিনেন না। বাদী সম্পর্কে কোনো কিছুই জানেন না। তাছাড়া এ মামলায় আসামিদের অনেকেই রয়েছেন নিহতের বন্ধু ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় মামলার বাদীর বিরুদ্ধে আগে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতের বাবা। তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন মিরকাদিম পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। কাজেই প্রকৃত আসামিদের এ মামলায় আনা হোক। বাদী পরিবর্তন করা হোক।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল ইসলাম জানান, শাহরিক হত্যার ঘটনায় ওই বছরের ১০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া ময়নাতদন্ত না করেই পরিবারের লোকজন তার লাশ দাফন করে। পরবর্তীতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালত ময়নাতদন্তের জন্য শাহরিকের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। এতে লাশ উত্তোলন করতে আসেন তারা। এ সময় স্বজনদের আপত্তি ও দলীয় নেতাকর্মীদের উত্তেজনা থাকায় লাশ উত্তোলন করা যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মামলার বাদীকে এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বাদীর ঠিকানাও সঠিক নয়।