হ্যান্ডবল ফেডারেশনে কোহিনুর যুগের অবসান ঘটেছে। ৩৪ বছর সাধারণ সম্পাদক থাকার পর তাকে সরকার সরিয়ে পদটা দিয়েছে হ্যান্ডবলের চেনামুখ সালাউদ্দিন আহমেদকে। দেশ রূপান্তরের সুদীপ্ত আনন্দ’র কাছে অনেক পরিকল্পনার কথাই বলেছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক
একটি আলোচিত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আপনাকে দিয়েছে সরকার। বহু বছর এই পদে ছিলেন আলোচিত সংগঠক আসাদুজ্জামান কোহিনুর। নতুন দায়িত্ব, নতুন চ্যালেঞ্জকে কী করে মোকাবিলা করবেন?
সালাউদ্দিন আহমেদ : ধন্যবাদ, প্রথমেই সবার দোয়া চাই। কোহিনুর ভাই আমাদের তৈরি করেছেন বলেই আজ আমরা এখানে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই, উনিই আমাদের তৈরি করেছেন। তবে উনি কতদিন এই পদে ছিলেন, এ বিষয়টায় আমি যেতে চাচ্ছি না। বরং আমি ভাবব অতীতে যা হয়েছে তার দায়ভার আমারও রয়েছে। কারণ আমি অতীতেও ছিলাম। তাই সাফল্য-ব্যর্থতার দায় আমাকেও নিতে হবে। এ কারণেই অতীতে কী হয়েছে এসব নিয়ে আমি বেশি কথা বলতে চাই না। বরং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে চাই সামনে এগিয়ে যেতে।
হ্যান্ডবলের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় খেলেছেন। অধিনায়কও ছিলেন। আবার হ্যান্ডবল সংগঠক হিসেবেও অভিজ্ঞতা একেবারে কম নয়। সেক্ষেত্রে ভালো-মন্দের দায় তো আসবেই আপনার ওপর।
সালাউদ্দিন : অবশ্যই। আমি নিজেই এই দায় কাঁধে নিচ্ছি। খেলা শুরু করেছিলাম ১৯৮৩ সালে। খেলা ছেড়েছি ১৯৯৭ সালে। এই সময়ে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছি, অধিনায়কও ছিলাম। খেলার ছাড়ার পরের চার বছর একটু দূরে ছিলাম না পেশাগত ব্যস্ততায়। এরপর থেকে সংগঠক হিসেবে বিভিন্ন পরিচয়ে হ্যান্ডবলের সঙ্গেই ছিলাম। সর্বশেষ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। তাছাড়া আমি দুটি ক্লাবকে চালাই। যার মধ্যে একটি প্রিমিয়ার লিগের সূর্যোদয় ক্রীড়াচক্র, যে ক্লাবে কেবল আমি নই অনেক তারকাই খেলেছে। হ্যান্ডবলের দেশসেরা কোচ কিরণ, আমাদের বর্তমান কমিটির সদস্য সেলিম মিয়া বাবুও এখান থেকে উঠে আসা। সারা জীবন এই ক্লাবেই খেলেছি। আবার আমরা তিনজন একই সঙ্গে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। প্রথমে ৬৭ জনকে ডেকেছিল। সেখান থেকে সেরা ১৬-তে সুযোগ পাই। সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দল। যাই হোক, সূর্যোদয় ক্লাবের পাশাপাশি আমার দাদার নামে ক্লাব আজগর আলী স্মৃতি সংসদ সর্বশেষ দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে এসেছে। সত্যি বললে হ্যান্ডবল আমাদের রক্তেই।
সেটা ঠিক। তবে এতদিনের সম্পর্ক সত্ত্বেও নিশ্চয় খেলাটা নিয়ে সন্তুষ্টির জায়গাটা সেভাবে নেই। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তো মনে হয় না খুব বেশি লোক চেনে-জানে?
সালাউদ্দিন : দেখুন আমি একটা ইচ্ছে নিয়েই দায়িত্ব নিয়েছি। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যদি আপনার কোনো পরিচিতি না থাকে, তবে দেশকে কেউ গোনায় ধরবে না। যতই কিছু করেন। মনে করেন আমার দশ হাজার খেলোয়াড় নেই, তবে আমার এক হাজার প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। এই এক হাজার নিয়েই কিন্তু আমি একটা ভালো জায়গায় যেতে পারব। আমার মূল লক্ষ্য থাকবে নারী ও পুরুষ উভয় জাতীয় দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।
অথচ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের এ রকম ক্যাম্প করার সব সুযোগ-সুবিধাই তো আছে। আপনাদের নিজস্ব স্টেডিয়াম, সেখানে আবাসনব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে কেন এতদিন এভাবে চিন্তা করা হয়নি? এই অবকাঠামো তাহলে সঠিকভাবে কাজে লাগায়নি আগের যারা ছিলেন?
সালাউদ্দিন : সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আমি এর দায়ভার নেব। নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটার সমালোচনা আমি করতে পারব না। তাহলে আমিও ব্যর্থ হব। আমি নিজেই সেই কমিটির লোক ছিলাম। তাই আমি সব জানি কী হয়েছে, কী হয়নি। আমি সামনে তাকাতে চাই। দুটি শক্তিশালী জাতীয় দল গঠনের কোনো বিকল্পই নেই। ভালো না খেললে কেউ মূল্য দেবে না। আমরা যদি তিনটি দল যদি গড়তে পারি, তাহলে তারা নিজেদের মধ্যে নিয়মিত খেলতে পারবে। অনূর্ধ্ব-১৭ যদি অনূর্ধ্ব-২০-এর সঙ্গে ২০টি ম্যাচ খেলে তাহলে তারা প্রস্তুত হবে। আবার অনূর্ধ্ব-২০ যদি অনূর্ধ্ব-২৪ এর সঙ্গে খেলে তাহলে তাদেরও প্রস্তুতি হবে। আর যদি অনূর্ধ্ব-২৪ অর্থাৎ জাতীয় দলের জন্য যদি আমরা বিদেশি কোনো দল এনে বেশি বেশি ম্যাচ খেলাতে পারি, অথবা বাইরের কোনো দেশে দীর্ঘ মেয়াদে পাঠাতে পারি, তাহলে কিন্তু জাতীয় দল শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠবে।
হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামকে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে আপনারা নিশ্চয় অনেক রাজস্বও পেয়েছেন। বহু বছর ধরেই এটা হয়ে আসছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি তো?
সালাউদ্দিন : না। অনিয়ম বা দুর্নীতির কোনো সুযোগই ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মানি রিসিপ্ট এবং চিঠি ছাড়া কাউকে আমরা স্টেডিয়াম ব্যবহার করতে দেব না। সেটা কঠোরভাবেই আমরা মেনে চলেছি। এই টাকাটা না হলে ফেডারেশনের স্টাফদের বেতন দেওয়া এবং এত বড় স্থাপনা দেখভাল করা আমাদের জন্য কঠিন। তবে আমাদের পরিকল্পনা থাকবে ব্যয় সংকোচনের। আমরা স্টাফ সংখ্যা কমিয়ে ফেলব। এ ছাড়া অকারণেই অফিস খোলা রেখে আড্ডাখানা হতে দেব না। তাতে বিদ্যুৎ বিল, আপ্যায়ন খরচ কমবে। দশ কাপ চায়ের দাম ৩০০ টাকা। আমরা যদি এটা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারি, তাতে ফেডারেশনেরই লাভ।
আপনার কয়েকজন সাবেক কলিগের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের ক্যান্টিনকে ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগিয়ে ক্যাটারিং ব্যবসা করেছেন...
সালাউদ্দিন : আমি এখন আর অতীত নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। এখন সামনের দিকে তাকাতে চাই। যা অতীতে হয়েছে, সে সব যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেই চেষ্টাই আমার থাকবে।
হ্যান্ডবলকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে কি কোনো উদ্যোগ নেবেন?
সালাউদ্দিন : অবশ্যই। হ্যান্ডবলকে কেবল স্টেডিয়াম-কেন্দ্রিক রাখতে চাই না আমি। ভবিষ্যতে বিশেষ দিবসে যে সব টুর্নামেন্ট করব, সেগুলো হবে উন্মুক্ত মাঠে। কোনো স্টেডিয়ামে নয়। প্রয়োজনে জেলায় জেলায় হবে একদিনের টুর্নামেন্ট। যাতে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে, আগ্রহ বাড়ে হ্যান্ডবল নিয়ে। এছাড়া স্কুল হ্যান্ডবলকে আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনাও আছে।