ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দৌলতপুর চৌধুরীপাড়ায় সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জামায়াত নেতা এমদাদ উল্লাহ চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। এমদাদ জামায়াতে ইসলামীর ফেনীর জেলার রোকন ও ফেনী পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড জামায়াতের একটি ইউনিটের আমির।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা তাদের বাড়ির প্রাচীর ভেঙ্গে গাছপালা কেটে ফেলে এবং দখলে নেয়। এছাড়া বসতবাড়ির রাস্তা ও ঘরে ঢোকার দরজায় ইট-বালিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রেখে পথচলা আটকে দিয়েছে।
এর আগে গত ৬ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জামায়াত নেতা এমদাদ দলবল নিয়ে ওই বাড়িতে একদফা ভাঙচুর করেন। সেদিন দুই সাংবাদিক সহোদর সোহেল হায়দার চৌধুরী ও পাভেল হায়দার চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন না। পেশাগত কাজে তারা ঢাকায় থাকেন। তবে বাড়িতে ছিলেন তাদের মা। তিনি বাঁধা দিলেও প্রতিপক্ষ মানেনি। দলবল নিয়ে এমদাদ তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ও হুমকি দেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় দফা ভাঙচুরের পর দখল করা জমিতে জামায়াত রোকনের প্রভাব খাটিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এ সময় এমদান উল্লাহ দাবি করেন, ‘ক্ষমতা এখন আমার। তোমার ছেলেদের আসতে বলো’।
উপায় না দেখে আইনের আশ্রয় নেন সাংবাদিক পাভেল হায়দার চৌধুরী। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ফেনী জেলার ডিসির অধীনে থাকা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালতে একটি পিটিশন (১৮৪/২৫) দাখিল করে বিচারপ্রার্থী হয় সাংবাদিক পরিবার। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট থানাকে দায়িত্ব দেয়। সে অনুযায়ী স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলার কাজ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
এরই মধ্যে আদালতের রায় টেম্পারিং করে প্রতিপক্ষ এমদাদ উল্লাহ গত ১৬ মার্চ কাজ করার অনুমতি নিয়ে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে সাংবাদিক পরিবার এডিএম কোর্টের শরণাপন্ন হয় এবং আদালতকে টেম্পারিংয়ের বিষয়টি অবহিত করেন। সেটি বিবেচনায় নিয়ে আদালত আবারও থানা পুলিশকে শান্তি রক্ষার দায়িত্ব দেয়। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে সাংবাদিক পরিবারের অন্য সদস্য ও বৃদ্ধ মাতাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ভূঁইফোঁড় কিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ ম্যানেজ করে সাংবাদিক সোহেল হায়দার চৌধুরী ও পাভেল হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে কাল্পনিক ও মিথ্যা অভিযোগ আনে এমদাদ উল্লাহ ও তার সঙ্গীরা। তারা দাবি করে, সাংবাদিক পরিবার আওয়ামী লীগ করে এবং প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। তবে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাংবাদিক পরিবারের বসতবাড়ির রাস্তা ও ঘরে ঢোকার দরজায় প্রতিপক্ষ এমদাদ উল্লাহ ও তার সঙ্গীরা ইট-বালিসহ অন্য সরঞ্জাম রেখে আটকে দিয়েছে। ঘরে ঢোকার রাস্তা খুলে দিতে বার বার অনুরোধ করা হলেও তা রক্ষা করেনি অভিযুক্তরা।
এদিক এমদাদ উল্লাহ ও তার সঙ্গীরা দুই সাংবাদিক সহোদরকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করলেও দেশের কোথাও দলটির কোনো পদে তাদের পরিবারের নাম পাওয়া যায়নি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, এমদাদ উল্লাহ ও তার সঙ্গীরা ২০১৫ সালে সাংবাদিক পরিবার বসতবাড়ি নির্মাণ করার সময় মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। সেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর সাংবাদিক পরিবারের ওয়ারিশীয় ও খতিয়ানভুক্ত জমির ওপর সমান ভাগ দাবি করে বণ্টন মামলা ১০৭/২১ দায়ের করা হয়। মামলার একটু অগ্রগতি হলে আরেকটি অংশকে প্রতিপক্ষ করে মামলা পিছিয়ে নেয়া হয়। এভাবে গত ৯ বছর হয়রানির শিকার হয়ে আসছে সাংবাদিক পরিবার। এমদাদ উল্লাহ গংরা এ সম্পত্তির বৈধ দাবিদার না হলেও একের পর এক মামলা করে দেড় দশক ধরে হয়রানি করে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এমদাদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯২ সালে ওই জায়গাটা আমরা খরিদ করি। গত ১৬ মার্চ মামলাটা আদালতে খারিজ হয়। তাই আমরা বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দখল করি।’ জোর করে সীমানা প্রাচীর ভেঙে দখল করাটা আইনি প্রক্রিয়া কিনা জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক পাভেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আমাদের বাড়ির সীমানায় দখলীয় বাগান। ৫ আগস্টের পর তারা জোর করে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে তা দখল করে। এ ব্যাপারে আমরা আদালতে মামলা করেছি।’
আইনজীবী মাসুদুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা আদালতে মামলা করলে তারা আমাদের না জানিয়ে টেম্পারিং করে রায় নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্ঠা করে। তাদের ক্রয়কৃত ৪ শতক দখলে থাকলেও তারা এখন আরো ৮ শতক অতিরিক্ত দাবি করে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে।’
ফেনী জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম মানিক বলেন, ‘দলীয় পদপদবি ব্যবহার করে কারো অপরাধ করার সুযোগ নেই। যদি কেউ করে থাকে আমাদের জানান। আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, সোহেল হায়দার চৌধুরী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি। পাভেল হায়দার চৌধুরী একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন।