বিশ্ব জুড়ে সাইবার হুমকির সংখ্যা ও জটিলতা বাড়ার আশঙ্কায় চলতি বছর নিরাপত্তা খাতে ব্যয় আরও বাড়বে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলো ক্রমাগত সাইবার আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। ফলে কোম্পানিগুলো ডাটা ও সিস্টেম সুরক্ষিত রাখতে নিরাপত্তা খাতে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে। আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
আইডিসির সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা খাতে ব্যয় ১২ শতাংশের বেশি বাড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও জেনারেটিভ এআইয়ের (জেনএআই) উত্থানে সাইবার হামলা আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি। ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলো আরও উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩-২৮ সালের মধ্যে নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং আগামী তিন বছরে বাজারটি ৩৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের ৭০ শতাংশের বেশি দখলে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ। তবে এ সময় বিশ্বের সব অঞ্চলে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া প্রত্যাশিত। লাতিন আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চল এ খাতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখবে। বাজার গবেষণা সংস্থা বলছে, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলে, বিশেষ করে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল দেশগুলোয় ডিজিটাল রূপান্তর ও উদীয়মান প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে চাহিদা অনেক বেড়েছে। সাইবার হুমকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সতর্ক হচ্ছে। পাশাপাশি সাইবার সুরক্ষাবিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে।
আইসিসির ডাটা ও অ্যানালিটিকসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ব্যবস্থাপক ইমান এলশেউই এ বিষয়ে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলো সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।’ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা বাজারের অর্ধেকের বেশি প্রতিনিধিত্ব করবে সিকিউরিটি সফটওয়্যার। এটি হবে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র, যার সমন্বিত বার্ষিক বৃদ্ধির হার (সিএজিআর) ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি হবে ক্লাউড নেটিভ অ্যাপ্লিকেশন প্রটেকশন প্লাটফর্ম (সিএনআপিপি), আইডেন্টিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ও সিকিউরিটি অ্যানালিটিকস সফটওয়্যারের চাহিদা। এসব আধুনিক প্রযুক্তি সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার হয়।
সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাপী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক গড়ে ১ হাজার ৮৭৬টি সাইবার আক্রমণের সম্মুখীন হয়। এ সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। এ সময় সাইবার হামলায় সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল শিক্ষা ও গবেষণা খাত। এ ধরনের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৩ হাজার ৮২৮টি সাপ্তাহিক আক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। তার পরই ছিল সরকার-সামরিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাত। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করবে ব্যাংকিং, ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় সরকার, টেলিকমিউনিকেশন, পুঁজিবাজার ও স্বাস্থ্যসেবা খাত। অন্যদিকে এ ব্যয়ে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে থাকবে গণমাধ্যম, বিনোদন ও জীববিজ্ঞান।