চলছে গ্রীষ্মকাল। গরম পড়লেই অনেকের খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছা কমতে শুরু করে। এই সময় ফল আর ঠান্ডা পানীয় বেশি খাওয়া হয়। গরমে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে মৌসুমের রসালো ফল তরমুজ। গলা ভেজাতে এমনকী শরীর ঠান্ডা করতে এই ফলের জুড়ি নেই। কিন্তু তরমুজ কি গরমে শুধু শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজই করে? তা নয়। পানির অভাব পূরণ করার পাশাপাশি শরীরে নানা খনিজের ঘাটতি মেটাতেও সাহায্য করে তরমুজ।
পাঁচ হাজার বছর আগে তরমুজের প্রথম দেখা পাওয়া গিয়েছিল মিশরে। তার পর স্বাদের গুণে এই ফল ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। তরমুজে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এসব উপাদান হৃৎরোগ থেকে শুরু করে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা কাজে লাগে। গবেষক ও পুষ্টিবিদেরা বলেন, ১০০ গ্রাম তরমুজে ৩০ ক্যালরি থাকে। রসালো, সুস্বাদু এই ফলটি যেমন আকারে বড় তেমনি এর গুণও অনেক। একনজরে দেখে নেওয়া যাক গরমে তরমুজ কেন উপকারী-
গরমে তরমুজ খেলে যেসব উপকারিতা পাবেন-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তরমুজে রয়েছে পটাশিয়াম ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন বি যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তরমুজ আমাদের দেহের ভেতর তৈরি হওয়া টক্সিনকে দূর করে, ফলে শরীর চাঙ্গা থাকে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও শুষ্কতা দূর করে
তরমুজের মধ্যে যে জৈব অ্যাসিড আছে তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। তরমুজে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা, যা ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার ধরে রাখে। তরমুজের রস খেলে সূর্যের তাপে ত্বক যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোদে পোড়া ত্বকে তরমুজের রস মাখলে ভাল ফল পাবেন।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন এ খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, এক টুকরো তরমুজ থেকে প্রায় ৯ থেকে ১১ শতাংশ ভিটামিন এ পাওয়া যায়। চোখ ভালো রাখতে প্রতি দিন ওই পরিমাণ ভিটামিন এ খেলেই যথেষ্ট।
শর্করার মাত্রা বজায় রাখে
তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল ৮০, যা এক বাটি কর্নফ্লেক্সের সমান। সে হিসেবে তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ যথেষ্ট কম। পুষ্টিবিদদের মতে, এই ফলের স্বাদ মিষ্টি হলেও এর গ্লাইসেমিক লোড ৫। এ কারণে এই ফল রক্তে শর্করার উপর তেমন কোনও প্রভাবই ফেলে না। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা সহজেই এই ফল খেতে পারেন।
পর্যাপ্ত লাইকোপেন রয়েছে
তরমুজের ভিতরের যে লালচে রং, তার উৎস হল এই লাইকোপেন। এটি আসলে একটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, লাইকোপেন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার প্রতিরোধী হিসাবেও কাজ করে এই যৌগ।
হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী
তরমুজে ‘সিট্রালিন’নামে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। এটি দেহে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
পেশির জোর বাড়ায়
তরমুজে উপস্থিত পটাশিয়াম পেশির জোর বাড়ায়। শরীরচর্চার পর এক বাটি তরমুজ খেলে পেশিশক্তি বাড়ে।
কিডনির জন্য উপকারী
তরমুজ কিডনির জন্য উপকারী একটি ফল। এটি কিডনি ও মুত্রথলিকে বর্জ্যমুক্ত করে। কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসকরা ডাবের জল, তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
তরমুজে প্রচুর পরিমানে পানি এবং অল্প পরিমাণে ক্যালোরি থাকায় পেটপুরে এই ফল খাওয়া যায়। এর ফলে খিদে থেকে মুক্তি মেলে, আর ওজন সেভাবে বাড়ে না।
শরীরে পানির ঘাটতি দূর করে
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। গরমে আমাদের দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বের হয়। ফলে এই সময় শরীরে পানির যে ঘাটতি তৈরি হয় তা পূরণ করে তরমুজ। শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।