রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ফেনীতে জমে উঠেছে ঈদের বাজার

ধনীদের ব্র্যান্ডের শোরুম, গরিবের ভরসা ফুটপাত

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৭ এএম

আর কয়েকদিন পরই ঈদুল ফিতর। সব মুসলিমের জীবনেই ঈদ নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। ধনী, গরীব নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এ দিন মেতে ওঠে উৎসবে। ঈদে কেউ পোশাক কেনেন জমকালো বিপণি বিতান থেকে, আবার কেউ কেনেন ফুটপাত থেকে।

ঈদের কেনাকাটা ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিং মল সব জায়গায় পছন্দের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আর পরিবারের সবার পোশাক এক দোকানে পেতে ভিড় করছেন নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুম গুলোতে, মধ্যবিত্তরা তুলনামূলক অল্প দামে পছন্দের পোশাক, গয়না, জুতা, স্যান্ডেল, অন্য প্রসাধনীসহ পছন্দের পণ্য কিনতে এখন ভিড় করছেন ফুটপাত ও খোলা জায়গায় বসানো অস্থায়ী দোকানগুলোতে।

ঈদে পণ্য বিক্রি বাড়াতে গ্র্যান্ড হক টাওয়ার, শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণিবিতান, গার্ডেন সিটি, তমিজিয়া মার্কেট, এসি মার্কেট, বড় বাজার ও শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো হরেক রকম লাল, নীল বাতি আর বাহারি রকমের নজরকাড়া আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। ২০ রমজানের পর থেকে বেচাকেনার ধুম পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে জামাকাপড়, জুতা, গেঞ্জিসহ বিভিন্ন পণ্যের সমারোহ সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। হাঁক-ডাকে জমে উঠেছে ফেনী রাজাঝিদিঘী এলাকার ফুটপাতের ঈদ বাজার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়ও। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতে বিত্তবানরা কেনা-কাটায় ব্যস্ত থাকেন। নিম্নবিত্তরা এসব বিপণী বিতানের আলোকসজ্জা দেখতে পারলেও সেখানে ঢোকার কিংবা কেনা-কাটার সামর্থ্য তাদের নেই। দোকানগুলোতে নারীদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, সালওয়ার কামিজ আর পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, টিশার্ট ও প্যান্টের পসরা সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য রঙিন জামাকাপড়, খেলনা এবং ঈদ স্পেশাল গিফট আইটেমও বিক্রি হচ্ছে।

ফেনী রাজাঝিদিঘী পাড়ে দিনমজুর, রাজমিস্ত্রির হেলপার, রিকশাচালক ও মাটি কাটার শ্রমিক শ্রেণির লোকজন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসেছেন কম পয়সায় ঈদের কাপড়-চোপড় কিনতে। দোকানিরাও বেশ উদ্যম নিয়ে বিক্রি করেছেন পোশাক। তাদের ঈদ কেনা-কাটা কিন্তু থেমে নেই। অনেকে শহরের ফুটপাতই তাদের ভরসা। সেখানেই তারা সেরে নিচ্ছেন তাদের ঈদ বাজার। তাদের আনন্দ সেখানেই।

সোমবার (২৪ মার্চ) বিকালে ফেনীর রাজাঝির দিঘীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নিম্নবিত্ত মানুষ। যেন সাধ্যের সবটুকু দিয়ে কেনার চেষ্টা। মুখভরা হাসিতে ঈদ উদযাপনের উচ্ছাস। মেয়ের জন্য জামা-জুতা কিনতে এসেছেন ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের আছিয়া খাতুন। মেয়ে বায়না ধরেছে, তাকে রাখি জামা কিনে দিতে হবে। 

রহিমা খাতুন নামে এক ক্রেতা জানান, আমাদের যা  সামর্থ্য  আছে তা দিয়েই ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি দেখতে চাই। মেয়ের জন্য ৩শ’ টাকায় একটা জামা এবং ছেলের জন্য ২শ’ পঞ্চাশ টাকায় একটা শার্ট কিনেছেন তিনি। এখন বাকি জুতো। 

পাশেই এক জুতা দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও উপচেপড়া ভিড়। শহর তলীর পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভ্যান চালক শামছুল আলম এসেছেন তার ছেলেমেয়ের জন্য জুতা কিনতে। শফিকুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘ফুটপাতে দাম কিছুটা সাশ্রয়ী এবং পণ্যের মানও বেশ ভালো। সেজন্য ফুটপাত থেকেই পাঞ্জাবিসহ কয়েকটি পোশাক কিনেছি। দামাদামি করে নিতে হচ্ছে।’ 

তিনি জানান, শহরের মার্কেটগুলোতে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশী। তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে ওসব দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার সামর্থ্য তার নেই। তাই দিঘীর পাড়ের এ সস্তার বাজারেই তার স্বস্তি। শামছুল আরো জানান, তিনি মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে এখান থেকে চার ছেলে মেয়ের জন্য জুতা কিনে নিয়েছেন।  

দিঘীর এক কোনায় ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা হয়, রাকিব, আব্বাস ও ইমরানের সাথে। জেলার পরশুরাম উপজেলা থেকে এখানে ঈদ শপিং করতে এসেছে। তারা চশমা, জুতা, শার্ট ও মানিব্যাগ কিনবে। রাকিব বলে, এখানে সস্তায় জিনিস পত্র পাওয়া যায়, তাই এসেছি ঈদেও শপিং করতে। 

আরো কিছু দূর গিয়ে দেখা হল, হোটেল শ্রমিক আবদুল আলীমের সাথে, দীর্ঘ ৬ মাস একটানা ফেনীতে কাজ করে ঈদে বাড়ি (হাতিয়া, নোয়াখালী) যাচ্ছেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে টাকা জমিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন এখানে। ছোট মেয়ের জন্য একটা রঙিন ঝলমলে ফ্রক কিনেছেন তিনি। স্ত্রীর জন্য হাতব্যাগ, মার জন্য জুতা, বাবার জন্য লুঙ্গি, বড় ছেলের জন্য পাঞ্জাবি। শনিবার কেনাকাটা সেরে বাড়ির পথে রওনা হবেন তিনি। আর নিম্নবিত্ত ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলোর চাহিদার যোগানে প্রস্তুত থাকেন রাজাঝির দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা।

সব পাওয়া যায় এ রকমারি বাজারে। নেই কারো কোন সাইনবোর্ড। পাওয়া যায় ছেলে- বুড়ো সবার, নারীদের পোশাকসহ পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, জুতো, চশমা, ঘড়ি, ইমিটেশন সামগ্রী, কসমেটিকস, বেল্ট, ব্যাগ, শোপিস, বাচ্চাদেও খেলনা, মোবাইল সামগ্রী, টুপি, আতরসহ সব রকম সামগ্রী। তবে এবারের ঈদে ব্যবসা মন্দ যাচ্ছে বলে জানান দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা। রোজার শুরুতেই ঈদকে লক্ষ্য করে তারা নিয়েছিলেন ব্যাপক প্রস্তুতি। আবার ভয়েও থাকতে হয়েছে। কখন জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান হয়। কারণ কিছুদিন আগেও তাদের সব দোকান পাট গুড়িয়ে দেয়া হয়।

আড়ৎ এ আসা নাসরিন এক ক্রেতা বলেন, মনে হচেছ কাপড়-চোপড়ের দাম একটু বেশী। তবুও পরিবারের সবার কাপড় এখানে একসাথে পাওয়া যায়, তাই এখানে এলাম। 

ফেনীতে চলতি বছর ঈদের বাজারে জেলা শহরে ছোট-বড় মিলে প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে। এসব দোকানে হাজার থেকে ১০০০ কোটি টাকা বিক্রির প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

ফেনী শহর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল বলেন, বিক্রি নিয়ে শুরুতে ব্যবসায়ীরা হতাশ হলেও ১৫ রমজানের পর থেকে বেড়েছে। বন্যায় ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছিল, আশা করছি ঈদের বাজারে বিক্রি করে তা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। ফেনীতে প্রবাসী বেশি থাকায় রেমিটেন্স আসছে, ব্যবসা হচ্ছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত