ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং চলতি আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের ‘হেড অব ক্রিকেট’ সঞ্জয় বাঙ্গারের সন্তান আরিয়ান পুরুষ থেকে নারী হয়েছেন –এটা পুরনো খবর। তার নাম এখন অনয়া। লিঙ্গ পরিবর্তনের পর তাকে যেসব অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে- সেটা এবার তিনি ফাঁস করলেন। ‘ভদ্রলোকের খেলা’ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধেও তার গুরুতর অভিযোগ আছে!
‘দ্য লালনটপ’ ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনয়া বলেন, ‘আমি যেমন অনেকের সাহায্য পেয়েছি, তেমনই অনেক হেনস্থার শিকারও হয়েছি। কিছু ক্রিকেটার আমাকে নগ্ন ছবি পাঠাত। একজন তো সবার সামনে গালিও দিয়েছিলেন। সেই তিনিই আবার আমার পাশে বসে আমার সঙ্গে ছবিও তুলতে চেয়েছিলেন। কিছুদিন আগে ভারতে গিয়েছিলাম। তখন এক ক্রিকেটার বলেছিলেন- “গাড়ির ভেতরে চলো, তোমার সঙ্গে শুতে চাই”।’
অনয়ার স্বপ্ন ছিল বাবার মতো ক্রিকেটার হবেন। খেলা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু লিঙ্গ পরিবর্তন করার পর তার জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আইসিসির নিয়মানুযায়ী, রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতরা নারীদের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। নারী ক্রিকেটারদের সুরক্ষা ও খেলার মধ্যে সাম্য বজায় রাখার জন্যই এই নিয়ম। যদিও এই নিয়মের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন অনয়া।
ক্রিকেটের নিয়মে বলা হয়েছে, বয়ঃসন্ধির আগে লিঙ্গ পরিবর্তন করালে একমাত্র তখনই কোনো রূপান্তরিতকে নারীদের ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর না হলে লিঙ্গ পরিবর্তন করানো বেআইনি। এই দ্বন্দ্বে পড়ে তার মতো ক্রিকেটারদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনয়ার। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেলেও অবশ্য নিজের পছন্দের জীবন বেছে নিতে পেরেছেন অনয়া।
পুরুষ থেকে নারী হওয়ার চিন্তা কীভাবে এলো –জানতে চাইলে অনয়া বলেন, ‘৮-৯ বছর বয়সে মায়ের আলমারি থেকে টেনে টেনে তার পোশাকগুলো বের করে সেগুলো পরতাম। তারপর আয়নায় নিজেকে দেখতাম। মনে মনে বলতাম, “আমি মেয়ে। আমি মেয়ে হতে চাই”। তবে সেটা কাউকে বলতাম না। আমার বাবা পরিচিত মুখ হওয়ায় সব নিজের মাঝেই রাখতাম। ক্রিকেট দুনিয়ায় কোনো নিরাপত্তা নেই। বিষাক্ত পুরুষে ভরা!’
অনয়ার বাবা সঞ্জয় বাঙ্গার ভারতের জাতীয় দলে খেলেছেন; পরবর্তীতে কোচের দায়িত্বেও ছিলেন। তার সন্তানও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। লন্ডনে গিয়ে লিস্টারশায়ারের হিঙ্কলে ক্রিকেট ক্লাবের হয়েও খেলতেন। ২০২১ সালে লিঙ্গ পরিবর্তন করার পর তার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এখন তিনি ম্যানচেস্টারে বসবাস করছেন। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কোনো আফসোস নেই, বরং তিনি গর্বিত।