বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

লৌহজংয়ে খাল দখল করে দোকানপাট নির্মাণের অভিযোগ

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় সরকারি খাল দখল করে দোকানপাট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কনকসার ইউনিয়নে কনকসার খালটির নাগেরহাট এলাকায় এসব দোকানপাট নির্মাণ কাজ চলছে।

অভিযোগ উঠেছে, খালটির পূর্বপাশে নাগেরহাট এলাকায় স্থানীয় আল আমিন তালুকদার ও তার ভাই তানভীর তালুকদাররা পাকা খুঁটি দিয়ে কাঠ-টিনের দোকানগুলো নির্মাণ করছেন।

স্থানীয় ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিন কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যে এ খালটি প্রস্থে কোথাও ৪০ ফুট আবার কোথাও ৫০-৬০ ফুট পর্যন্ত চওড়া। স্থানীয়ভাবে কনকসার খাল হিসেবেই এটি পরিচিত। খালটি সিংহেরহাটি এলাকার পদ্মা নদী থেকে শুরু হয়ে নাগেরহাট এলাকায় গিয়ে মিশেছে। 

সরেজমিনে কনকসার বাজার থেকে নাগেরহাট এলাকা পর্যন্ত খালটি ঘুরে দেখা যায়, খালের অধিকাংশ স্থান শুকনো পানিশূন্য। কনকসার এলাকায় খালের পূর্বপাশে ৫/৬টি বসতভিটা ও প্রায় ২০টির উপরে দোকানপাট আগে থেকেই নির্মাণ করা। খালের একই পাশের নাগেরহাট এলাকায় নতুন করে দুটি পৃথক স্থানে ৯টি নতুন দোকান নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব দোকানের খুঁটিগুলো কংক্রিট দিয়ে তৈরি। উপরে কাঠ বসানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, খালটি শত বছর পুরনো। এক সময় এ খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলত। জেলেরা মাছ ধরতো। খালের দুপাশের শতশত একর ফসলি জমি আবাদের জন্য খালটির পানি ব্যবহার করা হত। বর্ষা মৌসুমে কনকসার, হলদিয়া, কুকটিয়ার ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের পানি এ খাল দিয়ে নামতো। দেড় যুগ আগে খালের পূর্বপাশে সড়ক হওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত এক যুগ আগে খালের উৎস মুখে বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করায় খালটি পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে খালটি প্রায় মৃত অবস্থায় ছিল। ৩ কিলো ৪৩৫ মিটার খালটির প্রবাহ ফেরাতে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৬৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৮ টাকা ব্যয়ে খনন করে। 

এরই মধ্যে গত কিছুদিন ধরে খনন করা এ খালটির উপরে নাগেরহাট এলাকার আল-আমিন ও তানভীররা খনন করা খালে নতুন করে দোকানপাট নির্মাণ শুরু করেছে। আল আমিনদের দেখাদেখি আরও কয়েকজন দোকানপাট করার পরিকল্পনা করছে। খালটি বাঁচিয়ে রাখতে নির্মাণ করা ও নির্মাণাধীন স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করা দরকার বলে জানান স্থানীয়রা।

জুয়েল রানা নামে এক ব্যক্তি বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যে কেউ নিজেদের সম্পদ দাবি করে খাল দখল করে যাচ্ছে। কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় কনকসার খালটিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা দরকার।

স্থানীয় হৃদয় বেপারী নামে আরও এক বাসিন্দা বলেন, গত বছর সরকারিভাবে খাল খনন হয়েছে। খালে পানি নেই। এর মধ্যে আবার দোকান নির্মাণের হিড়িক শুরু হয়েছে। যা খালের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।  

দোকান নির্মাণের বিষয়ে অভিযুক্ত আল আমিন তালুকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে অংশে দোকান করা হয়েছে এই অংশসহ খালের অনেকখানি অংশ একসময় তাদের ছিল। পরবর্তীতে তাদের জায়গায় রাস্তাও হয়েছে। জায়গার পয়েস্তি হিসেবে খালের পাড়ে তাঁরা দোকান করেছেন। তবে সরকার যখন  চাইবে তারা সরকারকে সে জায়গা ছেড়ে দেবে। 

যে জায়গায় আল আমিন তালুকদাররা দোকান নির্মাণ করছিলেন সেটি সরকারি খাল উল্লেখ করে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. নেছার উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালটি খুব পুরনো এবং বড়। নাগেরহাট অংশে যে সব দোকানপাট হচ্ছিল সেগুলো আমরা সরিয়ে নিতে বলেছি। যারা দোকানপাট করেছে তারা যদি সরিয়ে না নেন তাহলে আমরা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাবো। সেই সঙ্গে এ খালটি যেখানে যেখানে অবৈধ দখল রয়েছে সেগুলো সার্ভে করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত