মানিকগঞ্জে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করায় মো. বিল্লাল নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রক্ত দেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়।
নিহত বিল্লাল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার (১৯ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে ভুল রক্ত সরবরাহ করা হয়। সেই রক্ত নার্সদের দেওয়া হলে তারা চিকিৎসকের অর্ডারপত্র চান। চিকিৎসক রক্ত দেখে অনুমোদন দিলে তা রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। রক্ত দেওয়ার পরপরই রোগীর শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে। বিষয়টি প্রথমে স্বজনরা বুঝতে না পারলেও পরে এক বহিরাগত ব্যক্তি তাদের বিষয়টি অবহিত করলে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের ডাকাডাকি করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। স্বজনদের দাবি, এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলে। পরে রাত ৮টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। ফলে সে অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার সামর্থ্য তাদের ছিল না। ফলে তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার দাবি জানান। কিন্তু এরপর রোগীর আর কোনো চিকিৎসা হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে।
রোগীর স্বজনরা বলেন, তিন ধাপে রক্ত যাচাইয়ের নিয়ম থাকার পরও ভুল রক্ত পুশ, হাসপাতালের ইচ্ছাকৃত অবহেলার প্রমাণ। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, বিকেল ৪টার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান দায়িত্বে ছিলেন। তখন ভুল রক্ত পুশ করার ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, আমি রাত ৮টায় দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ভুল রক্ত সঞ্চালনকে তিনি মারাত্মক ত্রুটি হিসেবে উল্লেখ করলেও, মৃত্যুর সনদে এ বিষয়টি উল্লেখ না করে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ঘটনার সময় দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও ডা. নূরজাহানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।