তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের জেরে যমুনা টেলিভিশনের পঞ্চগড় প্রতিনিধি রনি মিয়াজী হুমকি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার দুপুরে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরের কৃষি অফিস সংলগ্ন পাকা সড়কে এ ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, পেশাগত দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে রনি মিয়াজী উপজেলা পরিষদে গেলে, সেখানে উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মির্জা শাহরিয়ার রাজীব তার মোটরসাইকেল গতিরোধ করেন। এরপর কৃষি অফিস এবং তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রনিকে উদ্দেশ্য করে অসামঞ্জস্য কথাবার্তা বলেন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
পরে কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইলিয়াস ফারুক, মোসাদ্দেকুর রহমান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মশিউর রহমান এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জীবন ইসলামসহ আরও কয়েকজন রনিকে ঘিরে ধরেন। তারা বিভিন্ন উল্টাপাল্টা প্রশ্ন ও কটূক্তি করেন, এবং লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
এ সময় উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইলিয়াস ফারুক ও মশিউর রহমান মোবাইলে ভিডিও ধারণ শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় ফারুক সাংবাদিক রনিকে ক্যামেরায় ধারণকৃত কৃষকদের বক্তব্য ডিলিট করতে হুমকি দেন এবং আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলেন। তবে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনগণ উপস্থিত হলে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায় এবং কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা অবস্থান বদলান।
ঘটনার পরপরই সাংবাদিক রনি মিয়াজী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আব্দুল মতিনকে মোবাইলে অবহিত করেন এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান। পাশাপাশি বিষয়টি তেঁতুলিয়া মডেল থানাকেও অবগত করেন।
এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিক মহল। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, একজন সাংবাদিককে এভাবে হুমকি ও লাঞ্ছিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত।
উল্লেখ্য, এর আগেও অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের জেরে তেঁতুলিয়া কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে রনি মিয়াজীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক রনি মিয়াজী বলেন, “আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা পরিষদ চত্বরে গেলে উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাজীব আমার পথরোধ করেন এবং সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে হুমকি দেন। পরে আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এসে ঘিরে ধরেন, ভিডিও করতে থাকেন এবং বক্তব্য ডিলিট করতে বলেন। আমার সহকর্মী ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হলে তারা আচরণ পাল্টান। আমি ডিডি, ইউএনও ও থানায় মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। কৃষি অফিস তাদের অনিয়ম ঢাকতেই এমন আচরণ করছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘রনি মিয়াজী ভিডিও পাঠিয়েছেন এবং মুঠোফোনে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। সাংবাদিকেরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, এতে আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই। তাদের কাজে বাধা দেয়ারও কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌসের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।