শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বাংলাদেশের জ্বালানি বাজার আরও অস্থির করবে

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এ কৌশল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অস্থিতিশীল জ্বালানি বাজারকে আরও অস্থির করে তুলবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে।

আজ রবিবার বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এক বিবৃতিতে এসব সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সৌর প্যানেল আমদানির ওপর যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেছে, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্কহার ৩ হাজার ৫২১ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী এলএনজি চুক্তি করছে।

জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ লুইজিয়ানাভিত্তিক আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। এরপর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে লেখা এক চিঠিতে এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এলএনজি আমদানির উচ্চ ব্যয়ে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন এলএনজি আমদানি দেশটিকে আরও সংকটে ফেলবে। একই ধরনের পরিস্থিতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ) এর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ স্যাম রেনল্ডস বলেন, ‘বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করা একটি ব্যয়বহুল এবং ভুল সিদ্ধান্ত হবে। এতে গ্যাসের দাম এবং উৎপাদন খরচ উভয়ই বেড়ে যাবে।’

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা এম্বারের একটি নতুন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, থাইল্যান্ড, কোরিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো তাদের জিডিপির ৫ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করছে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে। নতুন করে এলএনজি আমদানির খরচ বাড়লে এসব দেশের জাতীয় ঋণ আরও বেড়ে যাবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এশিয়ার টেকসই ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৌর ও বায়ুশক্তি খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যার ৯৯ শতাংশ এখনো অব্যবহৃত রয়েছে। মার্কিন শুল্কের চাপ সত্ত্বেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইসিএ) এর বিশেষজ্ঞ লাউরি মাইল্লিভির্টা বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নতুন সৌর খাতের ৭০ শতাংশ এবং বায়ু বিদ্যুৎ খাতের ৬০ শতাংশের অংশীদার হবে।’

এনার্জি শিফট ইনস্টিটিউটের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ঙ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত ভূ-রাজনৈতিক সংকট থেকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাজার গড়ে তুলতে হবে এবং ব্যয়বহুল এলএনজি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

রিনিউয়েবলস ফার্স্টের বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ বাসিত গৌরী বলেন, গ্লোবাল সাউথের বাজার, বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বড় একটি সুযোগ তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, থাইল্যান্ড বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যদি এলএনজি অবকাঠামোয় অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে, তবে সেই বিনিয়োগ আটকে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বের জ্বালানি খাত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ক্রমাগত কমছে। এ অবস্থায় ব্যয়বহুল এলএনজি খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে ভবিষ্যতে তা বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত