মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ঢাকা স্টেডিয়ামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

আগেভাগেই টের পেয়ে দোকান মালিকরা সতর্ক হওয়ায় সত্যিকারের বিশৃঙ্খল পরিবেশটা দেখা যায়নি। প্রথমবার বলে আদালত কঠোর পথে হাঁটেনি

আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ১০:০১ পিএম

জাতীয় স্টেডিয়াম কম্পাউন্ড প্রতিদিনের মতো ছিল না গতকাল সোমবার। ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো খুব একটা চোখে পড়েনি। অবৈধ পার্কিংও সেভাবে দেখা যায়নি। জাতীয় স্টেডিয়াম লাগোয়া মওলানা ভাসানি জাতীয় হকি স্টেডিয়াম, ভলিবল ও কাবাডি স্টেডিয়ামে বরাদ্দ দেওয়া দোকানগুলোর সামনের হাঁটার রাস্তায় স্তূপ করে রাখা ছিল না মালামাল। হঠাৎ অচেনা দৃশ্যের নেপথ্যে ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।

কঠোর গোপনীয়তায় অভিযান পরিচালনার কথা থাকলেও কী করে যেন আগেভাগেই স্টেডিয়ামপাড়ার ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই আগেভাগেই সতর্ক হয়ে যান তারা। ভ্রাম্যমাণ আদালতেরও এই অভিযানটা ছিল শুধুই সচেতনতা বাড়ানোর। দোকান মালিক-কর্মচারীদের তারা সতর্ক করে গেছেন। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান হবে একেবারেই অজ্ঞাতে এবং স্টেডিয়ামের পরিবেশ নষ্টে পেতে হবে শাস্তি। এমনটাই জানালেন অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে ইশরাত। যাকে দেওয়া হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স। তবে অন্যান্য সময় এ এলাকায় এলে কোনোভাবেই একে ক্রীড়া স্থাপনা মনে হবে না। সাত দশকেও এখানে খেলাবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। এ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকেও বরাবর দেখা গেছে উদাসীন। দেরিতে হলেও এবার তারা সক্রিয় হয়েছে।

ফলে আশা করা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া স্থাপনার পরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হবে। এমনটাই আশা করছেন অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে ইশরাত, ‘আমাদের এই অভিযানটা অনির্ধারিত ছিল। তবে যে করেই হোক ব্যবসায়ীরা আগে থেকে সতর্ক হয়ে মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। বিগত বছরগুলোতে এ রকম অভিযান চালানো হয়নি। তাই আমরা প্রথমবার বলে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিইনি। বরং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ রকম অভিযান চলমান থাকবে এবং সেগুলো হবে ঝটিকা অভিযান। সে সময় অনিয়ম চোখে পড়লে অবশ্যই আমরা আইনত ব্যবস্থা নেব।’ অনির্ধারিত জায়গায় মালামালের অস্তিত্ব পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাৎক্ষণিক সরানোর নির্দেশ দেয় এবং এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে ভবিষ্যতে মালামাল ক্রোক ও জরিমানার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ইশরাত আরও বলেন, ‘স্টেডিয়াম এলাকা দর্শক এবং ক্রীড়াসংশ্লিষ্টরা যেন সুন্দর পরিবেশে যাতায়াত করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।’

ইসরাত ছাড়াও এ সময় তার সঙ্গী ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলামসহ দুই পরিচালক ও অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। দোকানগুলোর নির্ধারিত জায়গার চেয়ে বেশি জায়গা অবৈধ দখলে ক্রীড়া পরিষদের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগ পুরনো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কারও এ-সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা থাকলে বা প্রমাণিত হলে ক্রীড়া পরিষদের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।’

স্টেডিয়ামে ক্রীড়াবান্ধব পরিবেশ ফেরাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চেয়ে অনেক আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছিল। নানা প্রক্রিয়া ও চিঠি চালাচালি শেষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তাকে স্টেডিয়াম এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়। তবে চারজনের মধ্যে তিনজন অন্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে বদলি হয়ে যাওয়ায় সোমবার ইসরাত একাই অভিযান চালিয়েছেন। ভবিষ্যতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত