সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রজ্ঞাপন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৫-এর ক্ষমতাবলে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ)- মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-৩ শাখা কর্তৃক ১২ মে ২০২৫ তারিখে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তবে ইসিএ ঘোষণার আলোকে ওই অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন, দূষণনিয়ন্ত্রণ ও প্রশমন এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।
সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গঠিত ইসিএ এলাকায় পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ন্যায়সংগত রূপান্তরের জন্য স্থানিক পরিকল্পনা’ শীর্ষক চতুর্থ আন্তর্জাতিক নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা সম্মেলন (আইসিইউআরপি) ২০২৫-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান বক্তা হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ‘সুন্দরবনে কারখানা স্থাপনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা আত্মঘাতী হয়েছে। বড় বড় প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিকে “না” বলে মনে না করে তা যেন ন্যায্য প্রতিরোধ হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে পরিকল্পনার আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।’
গত ২১ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী কমিটির ১৬তম সভায় সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার ইসিএর মধ্যে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানানো হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
২০১৭ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভায় ইসিএ এলাকার সীমানা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওই কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকের কার্যবিবরণীতেই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ইসিএ সীমানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর জাতীয় পরিবেশ কমিটির বৈঠকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের ভেতরে শিল্পের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও পরিবেশবাদীরা বলছিলেন, শিল্পকারখানা সুন্দরবনকে সংকটে ফেলবে।