নোয়াখালী সদর উপজেলার একটি গ্রামে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
অভিযুক্তের নাম হাসান মাসুদ (২৭)। তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুজাহিদপুর গ্রামের আবুল কালাম মেম্বার বাড়ির বাসিন্দা এবং লক্ষীপুর পুলিশ লাইনে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তার ব্যাচ নম্বর (বিপি নম্বর) ৯৮১৮২১১৩৬৭।
মামলা এবং ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী সদর উপজেলার একটি গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পেশায় তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। ২০২২ সালে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে মাসুদকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে উঠলেও সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অমানবিক আচরণের কারণে তিনি বাবার বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
বিয়ের পর মাসুদ কৌশলে পদোন্নতি ও পুলিশ ক্যান্টিনে ব্যবসার অজুহাতে স্ত্রীর কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোট ৬ লাখ টাকা আদায় করে। টাকা দেওয়ার সময়ের ছবিও সংরক্ষিত রয়েছে। এরপর আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে। স্ত্রীর কাছে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমো ও মেসেঞ্জারে ভিডিও কলে আপত্তিকর আচরণ শুরু করে। সে সময় স্ত্রীর বিশেষ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে মাসুদ।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর তিনি নোয়াখালীর ৩ নম্বর আমলী আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। এরপর থেকেই মাসুদ ও তার পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। মামলা না তুললে মাসুদ, তার বোন ফেরদৌসী বেগম ও ভাই জহিরুল ইসলাম মিলে বিভিন্ন ভুয়া ফেসবুক ও টিকটক আইডি থেকে তার অন্তরঙ্গ ও বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তিনি লক্ষীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগ করলেও উল্টো তিনি ও তার পরিবার আরও হয়রানির শিকার হন। শেষ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত নোয়াখালী সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম ঊর্ধ্বতনদের তদবিরে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন জমা দেন।
পরবর্তীতে, পুলিশ সদস্য মাসুদের বোন বাদী হয়ে ভুক্তভোগী নারী, তার পরিবারের সদস্য এবং মামলার সাক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করে পাল্টা মামলা করেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কনস্টেবল হাসান মাসুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে, তাই কোনো মন্তব্য করব না। যা হবার আদালতেই হবে।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন।
এ বিষয়ে লক্ষীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। হাসান মাহমুদ নামে কেউ লক্ষীপুরে কর্মরত আছেন কি না, তাও জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’