এক মায়ের চোখের সামনে তার সন্তান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছটফট করছিল। মায়ের মন কি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? পারেনি কমলা বেওয়া। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন শেষবারের মতো। কিন্তু ভাগ্য সেদিন কারও প্রতি সদয় ছিল না। মা কমলাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝরে গেলেন ছেলের সঙ্গেই।
শনিবার (১৭ মে) সকাল ৯টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের দুলালী গ্রামে ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা।
নিহতরা হলেন- গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর স্ত্রী কমলা বেওয়া (৫০) ও তাদের একমাত্র ছেলে জামাল হোসেন (৩০)। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে পরিবারের একটি গরুরও।
প্রতিবেশি শরিফুল ইসলামসহ স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের মতো সকালে ঘরের এক কোণে রাখা অটোরিকশা চার্জে দিয়েছিলেন জামাল। পাশে ছিল পরিবারের গরুটি। হঠাৎ সেই চার্জার থেকে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে গরুটির শরীরে। শুরু হয় ছটফটানি। প্রিয় গরুটিকে বাঁচাতে ছুটে যান জামাল। ছুঁতেই বিদ্যুতের প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে তার শরীরেও।
এদিকে ছেলেকে বাড়িতে দেখতে না পেয়ে খোঁজ শুরু করেন মা কমলা। ছেলের খোঁজে গোয়ালঘরে গিয়ে দেখেন, ছেলে গরুর ওপর পড়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে ছেলের গায়ে হাত রাখতেই মায়ের বুকচেরা আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে এবং সঙ্গে-সঙ্গেই থেমে যায় তার প্রাণের স্পন্দনও।
চিৎকার শুনে ছুটে আসেন জামালের বোন। বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করতে গিয়ে সুইচের হাতল ভেঙে ফেলেন তিনিও। তার চিৎকারে প্রতিবেশী শরিফুল ইসলাম এসে বাঁশের সাহায্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ততক্ষণে নিথর হয়ে পড়েছেন মা, ছেলে ও গরু।
দুলালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন চন্দ্র রায় বলেন, মর্মান্তিক এই ঘটনায় একটি পরিবারের দুটি তরতাজা প্রাণ অকালে ঝড়ে গেল। এই ঘটনায় পুরো এলাকার মানুষ শোকাহত।
গোড়ল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মোস্তাকিন ইসলাম জানান, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিবারটিকে স্থানীয়ভাবে সহায়তা করার জন্য বলা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।