বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ফেনীতে কোরবানির পশুর বাজার

চোরাইপথে গরু না ঢুকলে লোকসান থেকে রক্ষা পাবেন খামারিরা

আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু মোটাতাজাকরণ ও লালন-পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফেনীর খামারি, ক্রেতা ও ব্যাপারীরা। গোখাদ্যের বাড়তি দাম, পশুর ওষুধসহ বিদ্যুতের খরচ খামারিদের সামাল দিতে কষ্ট হলেও ভালো দাম পাওয়ার আশায় দিনরাত পশুর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন তারা। তবে বাজারে আমদানি অথবা সীমান্তের চোরাইপথে গরু না ঢুকলে বড় ধরনের লোকসান থেকে রক্ষা পাবেন খামারিরা। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি, পশু খাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে ৮৭ হাজার ২২৭টি গবাদি পশু। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ এবং ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল ও ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৮৭ হাজার ২০০টি। তারমধ্যে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা হয় ৯০ হাজার ২৫০টি গবাদি পশু।

ফুলগাজীর মদিনা এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম বলেন, বন্যার ধকল কাটিয়ে চলতি বছর খামারে প্রায় দুই শতাধিক গরু রয়েছে। সময়ের সঙ্গে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। সেই অনুযায়ী দামও কিছুটা বেশি হবে স্বাভাবিক। সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ না করলে লাভবান হওয়া যাবে।

খামারিরা জানান, গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার সবকিছু অনুকূলে থাকলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু প্রায় সময় কোরবানির শেষ সময়ে বাইরে থেকে গরু আসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। বাজারদর অনুকূলে থাকলে আশা করি হাটে ভালো দাম পাব।

আবদুল ওহাব রিয়াদ ভূঞা নামে এক খামারি বলেন, জেলার সীমান্ত পরশুরামের, ফুলগাজীর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কিছু এলাকা দিয়ে বছরজুড়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। এমনটি অব্যাহত থাকলে কোরবানির বাজারে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও দায়িত্বশীল ভ‚মিকা প্রয়োজন।

বিজিবি সূত্র জানায়, ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে অবৈধপথে ভারত থেকে আসা ১২৩টি গরু আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু রয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো গরু না আসে সেজন্য সীমান্তে বিজিবি সচেষ্ট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

মোহাম্মদ আরাফাত নামে এক খামারি বলেন, ঝানজট ও জামেলামুক্ত ভাবে ইতোমধ্যে খামারে এসে ক্রেতারা গরু কেনা শুরু করেছে। অনেকে আগে এসেই পশু কিনে রাখছে। যা কোরবানির আগেরদিন পর্যন্ত খামারে রাখতে পারবেন। এ ছাড়া ক্রেতা চাইলে খামারে এসে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর দৈহিক ওজন মেপেও গরু কিনতে পারছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকটের শঙ্কা নেই। জেলায় অন্তত ৫ হাজার তালিকাভুক্ত খামারির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানির পশু লালন-পালন করছেন। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে অবহিতকরণ কার্যক্রম করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

তিনি আরও বলেন, কোরবানির সময় সবাই যাতে রোগমুক্ত পশু কোরবানি দিতে পারে তার জন্য শহর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাটেরিনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। রোগাক্রান্ত পশু যাতে কোরবানি দিতে না হয় তা নিয়ে আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা এখন কাজ করে যাচ্ছেন। 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত