মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

মোস্তাফিজের চতুর বোলিংয়ে আমিরাত-ভয় জয় করলো বাংলাদেশ

আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ০২:০২ এএম

পারভেজ হোসেন ইমন যদি জীবন না  পেতেন তাহলে কি হতো? সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ২১ রানে জয়ের পর সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিল। ৮৪ রানে জীবন পেয়ে ইমন করেছেন ১০০, আরো ১৬টা রান বেশি। বাংলাদেশ জিতেছে ২১ রানে। একটা সময় জয়ের জন্য ৩০ বলে ৫৩ রান প্রয়োজন ছিল আমিরাতের, সেখান থেকে তারা ম্যাচটা হারল স্রেফ অভিজ্ঞতার অভাবেই।

৫৪ বলে করা ইমনের সেঞ্চুরিতে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯১ রান তোলে বাংলাদেশ। ওমানের বিপক্ষে ২০১৬ সালে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির ৯ বছর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে তিন অংকের রানে পৌঁছেছেন ইমন। জবাবে ২০ ওভার খেলে ১৬৪ রানে অলআউট হয় আমিরাত। ৩ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।

শারজায় টসে হেরে আগে ব্যাট করতে হয় বাংলাদেশকে। তানজিদ হাসান তামিম এবং ইমন শুরু থেকেই বুঝিয়েছেন, দেখে শুনে বুঝে খেলার দিন আর নেই। তামিমের ইনিংসটা থেমে যায় ১০ রানে, ১ চার আর ১ ছক্কায় রানগুলো করেছিলেন ৯ বল খেলা এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন লিটন দাস, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধিনায়ক যার ব্যাট রান করতেই ভুলে গেছে। কমজোর প্রতিপক্ষ বা অধিনায়কত্বের অনুপ্রেরণা, কিছুই কাজে  লাগেনি লিটনের। এক ছয় মেরে আভাস দিলেও অভিষিক্ত বামহাতি সিমার মতিউল্লাহ'র করা প্রথম বলেই লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হয়েছেন ১১ রান করে। আচমকা নিচু হয়ে আসা ফুলটস লেগেছে প্যাডে, নিজেকে দূর্ভাগা ভাবতে পারেন ডিআরএস না থাকায় তবে আরও দূর্ভাগা ভাবতে পারেন এমন বলটা অনায়াসে সীমানাছাড়া করতে না পারার ব্যর্থতায়।

বাংলাদেশের যে ৭ জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন,সবাইকেই বলা যায় 'সফট ডিসমিসাল'। বোলারের বা  ফিল্ডারের কৃতিত্বের চেয়ে নিজেরাই উইকেট বিলিয়ে এসেছেন, হাতছাড়া করেছেন ইনিংস বড় করার সুযোগ। ১৫ বলে ২০ রান করে তাওহিদ হৃদয় যেমন সোজা ক্যাচ তুলে দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সহ-অধিনায়ক শেখ মেহেদি ব্যাটিংয়ে খানিকটা উপরে উঠে এলেও জায়গায় দাঁড়িয়ে অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। জাকের আলি অনিক ওয়েস্ট ইন্ডিজে বড় বড় ছয় মেরে আসলেও আমিরাতের বিপক্ষে ১৪ বলে করেছেন ১৩ রান যা ফিনিশারের ভূমিকায় একদমই বেমানান। শামীম হোসেন পছন্দ করেন উইকেটের পেছন দিকে শট খেলতে, যে কোন বলেই অফ সাইডে সরে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে খেলতে চান। এই অভ্যাসেই সরে এসে ব্যাটে বলে করতে না পেরে হয়েছেন এলবিডাব্লিউ, ৫ বলে করেছেন ৬।

ব্যাটিং লাইন আপে ইমন ছাড়া বাকিদের ব্যর্থই বলা চলে। কেউ কেউ আগের বদঅভ্যাস কাটাতে পারেননি, কেউ শুরুটা করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইমন লম্বা করেছেন ইনিংসটা। বুঝেছেন দিনটা তার, বাজে বলগুলোকে সীমানা ছাড়া তো বটেই বারদুয়েক মাঠছাড়াও করেছেন।তাকে নব্বইর ঘরে রেখে অন্যপ্রান্তে শামীম এবং তানজিম হাসান সাকিবের বেশি সময় স্ট্রাইকে থাকা, ওভারের পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নেয়াটা ছিল দৃষ্টিকটু। ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন যে মাথার সমস্যার কথা বলেন, তারই হাতেকলমে প্রমাণ যেন দিলেন তার শিষ্যরা। 

৯টা ছক্কা মেরেছেন ইমন, কোন ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। মাঠে উপস্থিত প্রবাসী দর্শকদের দিয়েছেন দারুণ বিনোদন, এই আনন্দের জন্যই তো তাদের স্টেডিয়ামে আসা। নো-বলে ক্যাচ দিয়ে ইমন বেঁচে গেলেন বোধহয় তাদের প্রার্থনাতেই। ইমনের রান তখন ৮৪।জীবন পেয়ে বাকি ১৬টা রান করে তারপর বোল্ড হলেন ইমন। ৫৪ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেবার পর ধারাভাষ্যকার বলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট আছে  নিরাপদ হাতেই!

৭ উইকেটে ১৯১ রানের ইনিংস, তাতে একজনই করেছেন ১০০ রান। বাকিরা যে নামের প্রতি বা প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেননি সেটা স্কোরকার্ডেই স্পষ্ট। তবে শারজার ছোট মাঠে এই রানটা যে নিরাপদ নয়, সেটা শুরুতেই টের পায় বাংলাদেশ। কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে লিটন তার ডেপুটি শেখ মেহেদি হাসানকে পাওয়ার প্লে'র ভেতর বিশ্বের সেরা বোলার বলেছিলেন। আমিরাতের ব্যাটসম্যানরা তাকে পাড়ার বোলারের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। শেষ ওভারে দুটো উইকেট নেয়ার ফলে ৪ ওভারে ৫৫ রান দেবার পরও স্কোরকার্ডটা ভদ্রস্থ দেখাছে, আদতে আমিরাতের ব্যাটসম্যানরা তার প্রতি কোন ভদ্রতা দেখাননি।প্রথম বলেই ছয় মেরেছেন ওয়াসিম, আসিফ খান মেরেছেন টানা ৩ বলে ৩ ছয়। ৩ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে উইকেটশুন্য থাকার  পর শেষ ওভারে ৬ বলে ৩৪ রান আটকানোর পরিস্থিতিতে বল করেছেন।

পাওয়ার  প্লে'তে ৫২ রান, ১০.২ ওভারে ১০০ রান, ১৯২ রান তাড়ায় কক্ষপথেই ছিল আমিরাত। ওয়াসিমের ৩৯ বলে ৫৪,রাহুলের ২২ বলে ৩৫ ও আসিফ খানের ২১ বলে ৪২ রানের ইনিংসের পরও আমিরাত জিততে পারেনি কারণ তাদের কেউ একজন ইমনের মত ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। তাই ২১ রান পেছনে থেকেই তাদের থামতে হয়েছে। 

সিরিজের পরের ম্যাচে থাকবেন না মোস্তাফিজুর রহমান, ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তার এই আঁটসাঁট বোলিংটা না হলে কিন্তু ম্যাচটা সহজে জেতে না  বাংলাদেশ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত