শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার

আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম

গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং ত্রাণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ইসরায়েল যদি নতুন করে সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা অব্যাহত রাখে তাহলে তারা নিষেধাজ্ঞাসহ ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তি না করেই গাজা ত্যাগ করার পর এক সপ্তাহ না যেতেই নতুন করে বিধ্বংসী স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘গিডিওনের রথ’ অভিযানের অংশ হিসেবে গত একদিনে তাদের বাহিনী উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় প্রবেশ করেছে। ইসরায়েল বলছে, হামাস নতুন জিম্মি চুক্তিতে রাজি না হলে অভিযান চলবে। 

সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, মিত্রদের চাপের মুখে ১১ সপ্তাহ ধরে গাজা অবরোধ করার পর ‘ন্যূনতম’ পরিমাণ ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নেতানিয়াহু বলেন, বাস্তব ও কূটনৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদের দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে পৌঁছানো উচিত নয়।

এদিকে দ্রুত ত্রাণ না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যাবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার। ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ তুলে নেওয়ার পর সোমবার পাঁচটি ত্রাণবাহী লরি অতিক্রম পাঠানো হলেও সেগুলো এখনো এলাকায় পৌঁছায়নি।

ইসরায়েল বলছে, হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণের অপব্যবহার ও চুরির অভিযোগ এনেছে- যা হামাস অস্বীকার করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে গাজা সিটির এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য এক টুকরো রুটি খুঁজে পাচ্ছি না... দক্ষিণাঞ্চল থেকে আমরা কীভাবে সাহায্য পাব? সেখানে যাওয়া আমাদের জন্য কঠিন হবে। আমরা একটি ট্র্যাজেডির মধ্যে বাস করছি।’

এদিকে গাজার এমন মানবিক পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার তিন নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইসরায়েল যদি তার বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখে তবে তারা প্রতিক্রিয়ায় ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

‘নেতানিয়াহু সরকার যখন এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড চালাবে তখন আমরা দাঁড়িয়ে থাকব না। ইসরায়েল যদি নতুন করে সামরিক আক্রমণ বন্ধ না করে এবং মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে, আমরা এর প্রতিক্রিয়ায় আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেব’, সোমবার এক বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে তা নির্দিষ্ট করে না জানিয়ে তিন দেশ বলেছে, ‘আমরা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান হিসেবে ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ লক্ষ্যে অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

গাজায় ‘অসহনীয়’ মানবিক দুর্ভোগের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারা ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা অবরোধ এবং পশ্চিম তীরে অব্যাহত বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে নিষেধাজ্ঞাসহ সম্ভাব্য আরও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য মার্কিন, কাতার এবং মিশরের নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করে।

এদিকে তিন বিশ্বনেতার বিবৃতির জবাব দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক্স-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে হামাসের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। 

নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ইসরায়েলকে একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ শেষ করতে হবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত