রাজশাহীর সাবেক এক বিএনপি নেতা নওগাঁর এক ঠিকাদারকে মোবাইলে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সড়ক বিভাগের ঠিকাদারি কাজের বিষয়ে ঈদের আগেই তার সঙ্গে বসে সমাধান করার জন্য চাপ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ঠিকাদারকে। ফাঁস হওয়া একটি অডিও ক্লিপে এই তথ্য পাওয়া বেরিয়ে এসেছে।
অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক ওই নেতার নাম মাহমুদুল হক রুবেল। তিনি রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানা বিএনপির থেকে পদত্যাগ করা যুগ্ম আহ্বায়ক। আর ভুক্তভোগী ওই ঠিকাদারের নাম শাহজাহান আলী। তিনি মান্দার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলে ফোনালাপ সূত্রে জানাগেছে।
দুজনের মধ্যে ফোনালাপে শোনা যায়, রুবেল ঐ ঠিকাদারকে বলছেন— ‘রোডসে আর টেন্ডার সাবমিট করবেন না।’ শাহজাহান প্রশ্ন করলেন, ‘কেন?’ জবাবে রুবেল বলেন, ‘কারণ, আমরা নিজেরাই খাইতে পাচ্ছি না। আমার কথা হলো, আপনি ভাই টেন্ডার-মেন্ডার দিয়েন না, আমার অনুরোধ থাকল। আমরা ১৭ বছর খাইতে পারিনি। এখন আমরা খাব।’
জানা গেছে, কলরেকর্ডটি সোমবার দুপুরের। পৌনে ১০ মিনিটের ওই কথোপকথনে রুবেলের সঙ্গে হারুন নামে একজন কথা বলতে শোনা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) রাজশাহীর বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে ৯টি লটে গাছ বিক্রির জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেন শাহজাহান আলী। শাহজাহান আলী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রাখা বাক্সে দরপত্র জমা দিয়ে এতে তিনি প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকায় দুটি লটের কাজ পান।
এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদার শাহজাহান আলীকে ফোন করেন রুবেল। ফোনে রুবেল ঠিকাদার শাহজাহানকে বলেন, ‘আপনি এই কাজগুলা কইরেন না, জাস্ট সমস্যা হবে।’
শাহজাহান বলেন, ‘আপনারা যদি নিষেধ করেন, তাহলে বিষয়টা কেমন হয় না?’ রুবেল বলেন, ‘এখন এমন অবস্থা হয়েছে, মান্দার লোক শুনলেই চার-পাঁচটা থাপ্পড় মারবে।’ শাহজাহান বলেন, ‘মান্দার লোক তো আরও টেন্ডার করছে।’
জবাবে রুবেল বলেন, ‘একটার পর একটা অপমান হবেই, দেখবেন। আপনাকে আমি বললাম ভাই ব্যক্তিগতভাবে। মাথায় রাইখেন।’
শাহজাহান জানতে চান, ‘কী করলে অপমান হবে না সেইটা বলেন।’ রুবেলের জবাব, ‘টেন্ডার না দিলেই অপমান হবেন না।’ ‘টেন্ডার তো হয়েই গেছে’, শাহজাহান এ কথা জানালে এরপর অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন বিএনপি নেতা রুবেল।
শাহজাহান বলেন, ‘আপনি টেন্ডার করবেন, করে কাজ নিবেন আপনি।’ শাহজাহান বলেন, ‘নিজের এলাকাতে এখন কুইত্তাও ভাগ দেয় না, জানেন? কুইত্তাও বুলছে যে, তোর এলাকা তুই খা, আমার এলাকা আমি খাই।’
এ সময় শাহজাহান রুবেলের দলীয় পরিচয় জানতে চান। তখন রুবেল বলেন, ‘আমি বিএনপির সভাপতি, রাজপাড়া থানার।’ যদিও রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।
রুবেল সভাপতি পরিচয় দেওয়ার পর শাহজাহান জানান, তিনিও ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছেন। এখন বিএনপি করেন।
এ পর্যায়ে রুবেলের কাছ থেকে ফোন নেন হারুন, তিনি নিজেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবীর লালুর ভাই বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘এরপরে টেন্ডার হলে আপনি আমাদের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখে কাজ করবেন। আপনার ভাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেই টেন্ডার ড্রপ করে।’
শাহজাহান বলেন, ‘আপনার সাথে যোগাযোগ রেখেই তো করি ভাই। আমরা তো বুঝি। যে এলাকার কাজ সে এলাকার কিছু দাবি থাকে। ব্যবসা করি গোটা বাংলাদেশ, এটা আমরা বুঝি। সুতরাং, যেটাই হোক করা হবে। কারণ, আমাদের দিকেও দেখতে হবে। একটা লট পেয়েছি ১৬ বছর পর। আমি ভাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলেরও শিক্ষা সম্পাদক ছিলাম। আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবই ভাই, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।’ অডিও সম্পর্কে জানতে রুবেলকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এগুলা সব ভুয়া।