জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা না বলে একটি দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের জন্য লজ্জাজনক।
বুধবার (২১ মে) আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরানোর জন্য এবং মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে যদি সঠিকভাবে গঠিত না করা যায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করি না। তাই নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসির ফিটনেস আছে কি না, তার প্রথম কেস হিসেবে আমরা ধরে নেব স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারে, তাহলে আমরা মনে করব এই কমিশনের ফিটনেস রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য।
রকিব উদ্দীন কমিশন থেকে শুরু করে যারা নির্বাচনের নামে নাটক মঞ্চস্থ করেছে, যারা দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর ছুরি চালিয়েছে—তারা এখনো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি। গত ১৫ বছরে হাসিনা রেজিমের সাথে যারা ছিল, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। যদি না আনা হয়, তাহলে ছাত্র ও জনতা তাদের নিজ হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবে।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালের আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। এই আইনকে অন্তত ২০টি রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। বিএনপি এ আইনকে 'বাকশালি' বলে আখ্যায়িত করেছিল। আমরা যখন নাগরিক কমিটিতে ছিলাম, আমাদের কাছেও প্রস্তাব এসেছিল যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি পুনর্গঠন হবে। আমরা বলেছিলাম, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে যেসব আওয়ামী ফ্যাসিবাদী প্রভাব আছে এবং যে সকল আইন-কানুন রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ঐকমত্য ভিত্তিক সংস্কার না করলে দেশ গভীর সংকটে পতিত হবে। কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার নানা কৌশলে ইসি পুনর্গঠন করেছে, যা সরাসরি গণ-আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
তিনি বলেন, যদি দ্রুত নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ না করে এবং পুনর্গঠন না হয়, যদি ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশগুলো মান্য করা না হয়, যদি দেশকে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা না হয়, তাহলে উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
এ সময় আইন উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের এই ‘কুসুম কুসুম খেলা’ আর চলবে না।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জনসেবা উপেক্ষা করে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন, আজ পুরো ঢাকা অবরুদ্ধ। জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এখনো নির্বাচন হয়নি, আর আপনারা আগেই জোর-জবরদস্তি শুরু করেছেন। নির্বাচন হলে তো আপনারা হাসিনার চেয়েও বড় ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনুন। না হলে, জনগণ যেভাবে শেখ হাসিনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, তেমনিভাবে আপনাদেরও ছুড়ে ফেলবে।